ব্যুরো নিউজ ২৩শে আগস্ট ২০২৫ : আসন্ন ছবি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে আবারও বিতর্কের মুখে পড়েছেন পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী। সোমবার তিনি ঘোষণা করেছেন যে, যদি পশ্চিমবঙ্গে তার ছবির মুক্তি আটকে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি সাংবিধানিক এবং আইনি পথ অবলম্বন করবেন। ছবিটি ৫ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা। গত শনিবার কলকাতায় ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে বাধার সম্মুখীন হন অগ্নিহোত্রী। তার অভিযোগ, প্রথমে একটি মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়। পরে সেটি একটি হোটেলে স্থানান্তরিত করা হলে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং পুলিশ এসে অনুষ্ঠানের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করে অগ্নিহোত্রী বলেন, “আমরা সংবিধান মেনে চলব। আমরা আইনি পথে যাব। যদি তারা আমাদের আটকায়, আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। আমরা আপনাদের মতোই সাধারণ নাগরিক… আমরা প্রার্থনা করব যেন সুস্থ চিন্তার জয় হয় এবং রাজ্য সরকার এমনটা না করে।”
ছবির বিষয়বস্তু ও বিতর্ক
‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ ছবিটি ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টের কলকাতা দাঙ্গার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। মুসলিম লীগের ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’-এর আহ্বানের পর এই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। ছবিতে সেই সময়ের বীভৎসতা, যেমন বাঙালি পুরুষ ও নারীদের উপর সহিংসতা এবং মুসলিম জনতা দ্বারা মৃতদেহ বিকৃত করার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ট্রেলারে দেখানো হয়েছে, সেই সময়ের পুলিশ কীভাবে এই দাঙ্গার প্রতি উদাসীন ছিল।
তবে, ছবিটি ইতিমধ্যেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে গোপাল চন্দ্র মুখার্জির নাতি শান্তনু মুখার্জি ছবির বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। শান্তনুর দাবি, ছবিতে তার দাদাকে ‘কসাই’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার সময় গোপাল মুখার্জি মুসলিম জনতা প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
অগ্নিহোত্রী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ছবিতে গোপাল মুখার্জির চরিত্রটি একটি কাল্পনিক চরিত্র এবং এটি গল্পের মূল অংশ নয়। তিনি বলেন, “আমি তার ব্যক্তিগত ইতিহাসে যাব না। শান্তনুর সাক্ষাৎকার দেখুন। আমি আপনাদের সব লিঙ্ক দিতে পারি। বিবিসির কাছে গোপাল মুখার্জির একটি সাক্ষাৎকার আছে। তিনি সেই সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন, আমরা কেবল ততটুকুই দেখিয়েছি। গোপাল মুখার্জির জীবন বা রাজনীতি নিয়ে আমার কিছু করার নেই। তিনি একজন নায়ক ছিলেন এবং আমি তাকে একজন নায়ক হিসেবেই দেখিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি গোপাল মুখার্জিকে খুব শ্রদ্ধা করি। তার নাতিরা তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করেন। সেখানে তাদের বাধ্যবাধকতা আছে… তারা আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন, আমরা তার আইনি জবাব দিচ্ছি।”
সেন্সর ছাড়পত্র ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম
অগ্নিহোত্রী দাবি করেন, ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-এর সেন্সর বোর্ড কোনো কাটছাঁট ছাড়াই ছাড়পত্র দিয়েছে, যদিও ছবিটি প্রথমে পরীক্ষণ কমিটি এবং পরে সংশোধন কমিটির মাধ্যমে গেছে। তিনি বলেন, “এই ছবিটি অনেক দায়িত্ব এবং সততার সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে। কেউ এর বিরোধিতা করতে পারবে না। বাঙালিরা এই ছবি নিয়ে গর্ব করবে।”
‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ এবং ‘দ্য তাসখন্দ ফাইলস’-এর মতো ছবি তৈরি করে পরিচিতি পাওয়া অগ্নিহোত্রী বলেন, তিনি হিন্দু সভ্যতা ও ইতিহাস নিয়ে ছবি তৈরি করেন। তার মতে, সত্যকে তুলে ধরা তার ছবির মূল উদ্দেশ্য।
Mahavatar Narsimha : বক্স অফিসে ঝড় তোলার পর এবার ওটিটিতে মুক্তির অপেক্ষায় নরসিংহ অবতারের কথা !
এই পরিস্থিতিতে ছবিটি পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি না পেলেও, অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তা দেখানো হতে পারে, যেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র মতো অতীতে বিতর্কিত ছবি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যা তথ্যের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে মনে করা হয়।