প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি: বাম আমল থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসা জঙ্গি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন রাজ্যের উৎপাদিত পণ্যের পরিমান কমে যাওয়া এবং শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে না পারার কারনে এই মুহূর্তে রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। বুধবার কলকাতার ন্যাশ্যানাল লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে একটি প্রেক্ষাগৃহে ‘বিকাশ ভারত ও ভারতের পূর্বাঞ্চল’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। একের পর এক পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, গত ১২ বছর রাজ্যের তৃণমূল জমানায় সরকার ঋণ ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। কোষাগারের আয়ের ৩৫ শতাংশই ধারের সুদ মেটাতে ব্যয় হচ্ছে। সেই সঙ্গে দিতে হচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারী কর্মীদের পেনশনের টাকা। এই অবস্থায় মূলধন সৃষ্টির সুযোগ ও দ্রুত কমেছে। বাম আমলে ২০১০ সালে যে মূলধন সৃষ্টির হার ছিল ৬.৭ শতাংশ তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২.৯ শতাংশে। দেশের স্বাধীনতার পর মোট শিল্প উৎপাদনের ২৪ শতাংশই আসত পশ্চিমবঙ্গ থেকে। এবং তা ছিল চোখে পড়ার মত। আর এখন সেই জিডিপির হার কমে দাড়িয়েছে ৩.৫ শতাংশ।
‘মমতার পুলিশের হেফাজতে শাহজাহান’ বিস্ফোরক শুভেন্দু
নির্মলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, এ রাজ্যে উপযুক্ত শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। সেই সঙ্গে যে টুকু শিল্প আছে তোলাবাজির দৌরাত্ম্যে সেগুলিরও বেহাল দশা। ১০০ দিনের কাজের টাকা ও রাজ্যে আবাসন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের অর্থ নয়-ছয় হয়েছে। এ সবই প্রভাব ফেলেছে রাজ্যের অর্থনীতিতে। বিভিন্ন প্রকল্পে সর্ব স্তরের দুর্নীতি ধরা পড়েছে। তাই বহু শিল্পই এ রাজ্য থেকে লোটা- কম্বল গুটিয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। অথচ এক সময় পশ্চিমবঙ্গ শিল্পের দিক থেকে সবচেয়ে সম্ভবনাময় ছিল। এখনও সেই সম্ভবনা আছে। মোদী সরকারের লক্ষ্য দেশের আর্থিক উন্নতিতে সামনের সারিতে আসুক পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু তা হয়নি।
নির্মলা সীতারমনের কঠিন বাস্তব সত্য হজম করতে পারছে না তৃণমূল সরকার। রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সব শুনেও মন্তব্য করতে চাননি। এমনকি তৃণমূলের যেসব কেষ্ট- বিষ্টুরা সব বিষয়েই সব জানতার মত টিভি ক্যামেরার সামনে ভাষণ দিয়ে থাকেন তারাও স্পিকটি নট। নির্মলা তার সমালোচনার মাত্রা আরও বাড়িয়ে বলেন, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ব্যপক ঋণ ভারে জর্জরিত। সেখান থেকে বেরোবার কোনও প্রচেষ্টা রাজ্য সরকারের নেই। কৃষিপণ্য উৎপাদনেও পিছিয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার একেবারেই পিছিয়ে। যে স্বাক্ষরতার নিরিখে বাম জমানার শেষ দিকেও কেরলের পরে ছিল পশ্চিমবঙ্গ সেখানে এখন পিছিয়ে পড়েছে গুজরাট, মহারাষ্ট্রের থেকে। তোলাবাজি এ রাজ্যে একটা সার্বভৌম অধিকারের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটা শিল্প সম্ভাবনা, কৃষির উন্নয়ন এবং পরিকাঠামোর উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।