ব্যুরো নিউজ ৩০ মে : পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে চলা দীর্ঘ আন্দোলনের চাপানউতোর ক্রমশ বাড়ছে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পর রাজ্য সরকারের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ চাকরিহারারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিয়ালদা থেকে ‘অর্ধনগ্ন মহামিছিল’-এর ডাক দিয়েছিলেন। শুক্রবার সকালে সেই মিছিল শুরুর আগেই শিয়ালদায় তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়, পুলিশ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে আটক করে। একদিকে আন্দোলনকারীদের অনমনীয় মনোভাব, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ এবং মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা জবাব – সব মিলিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন তুঙ্গে।
চাকরিহারাদের ‘অর্ধনগ্ন মহামিছিলের’ ডাক: ক্ষোভ ও প্রতিবাদের নয়া পন্থা
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে চাকরিহারারা তাদের শুক্রবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শিয়ালদা থেকে এক ‘মহা মিছিল’-এর পাশাপাশি, তারা ‘অর্ধনগ্ন’ হয়ে এই মিছিল করার কথা জানান। তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে চাকরিহারাদের প্রতিনিধিরা বলেন যে, রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাদের “জামাকাপড় পোশাক প্রায় খুলেই গিয়েছে”, অর্থাৎ তাদের পরিস্থিতি অর্ধনগ্ন হওয়ার মতোই। এই প্রতীকী প্রতিবাদী পন্থাকে তারা আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।
মৃত্যু ও বাড়তি যন্ত্রণা: প্রবীণ কর্মকারের প্রয়াণ
আন্দোলনকারীদের দাবি, রাজ্য সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা এবং টানাপোড়েন তাদের মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই প্রেক্ষিতে, অমুইপাড়া উদ্বাস্তু বিদ্যাপীঠের শিক্ষক প্রবীণ কর্মকারের মৃত্যু তাদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিদের দাবি, প্রবীণ কর্মকার দুটি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন এবং চাকরি হারানোর পর চিকিৎসা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তায় জর্জরিত ছিলেন। তাদের প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, “মুখ্যমন্ত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এই মৃত্যু যন্ত্রনাকে ত্বরান্বিত করেছে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের একাধিক ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় আক্রান্ত হয়েছে।”
শিয়ালদায় চরম উত্তেজনা: মিছিল শুরুর আগেই আটক
শুক্রবার সকাল থেকেই শিয়ালদা চত্বর রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। চাকরিহারাদের সকাল ১১টা নাগাদ মিছিল শুরুর কথা থাকলেও, তার আগেই তারা জড়ো হতে শুরু করেন। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হয়ে ওঠে শিয়ালদা স্টেশন চত্বর। মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী, যারা মিছিল রুখতে মরিয়া ছিল। মিছিল শুরুর আগেই মেট্রো স্টেশনের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন চাকরিহারাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এই আটক সত্ত্বেও, চাকরিহারা শিক্ষিকারা তাদের ‘আন্দোলন চলবে’ বলে জানিয়েছেন এবং আটককৃতদের মধ্যে একজন শিক্ষক মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে “রাজধর্ম পালন করুন” বলে বার্তা দেন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্র-রাজ্য তরজা: মোদীর আক্রমণ ও মমতার পাল্টা
চাকরিহারাদের আন্দোলন যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই আলিপুরদুয়ারে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি সরাসরি বলেন, “TMC ওদের জীবন বরবাদ করেছে”। এর ফলে রাজ্যের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। যদিও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পাল্টা বিবৃতি দিয়ে এই আক্রমণের জবাব দিয়েছেন, যা রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা: ফের পরীক্ষায় বসার নির্দেশ ও পদের সংখ্যা বৃদ্ধি
আন্দোলন এবং প্রতিবাদের আবহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসএসসি নিয়ে এক বড় ঘোষণা করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে আগামী ৩১শে মে-র মধ্যেই চাকরির নোটিফিকেশন দেবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার (মে ২৮, ২০২৫) নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৩০শে মে চাকরির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে এবং ১৬ই জুন থেকে চাকরির আবেদন করা যাবে। অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৪ই জুলাই। শীর্ষ আদালত ২৪ হাজার ২০৩টি পদে নিয়োগের কথা বললেও, রাজ্য সরকার আরও পদ বাড়িয়ে মোট ৪৪ হাজার ২০৩টি পদে নিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, যার মধ্যে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদও রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, বয়সের কারণে চাকরিহারাদের সমস্যা হবে না। যারা দীর্ঘদিন কাজ করে এসেছেন এবং বয়স পেরিয়ে গেছে, তাদের বয়সে ছাড় দেওয়া হবে এবং প্রত্যেকেরই পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকবে। যারা এতদিন কাজ করেছেন, তাদের ‘এক্সপেরিয়েন্স অ্যাডভান্টেজ’ দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজেদের কর্মস্থানে থেকে যেতে পারেন।
তবে, চাকরিহারাদের একটি বড় অংশ এই নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার বিরোধিতা জানিয়ে সরব হয়েছে।