ব্যুরো নিউজ ২০ জুন : সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারানো ২০১৬ সালের SSC প্যানেলের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের রাজ্য সরকারের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এই অন্তর্বর্তী রায়ের ফলে রাজ্য সরকার পরবর্তী কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত এই ভাতা প্রদান করতে পারবে না। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টের এই রায় বহাল থাকবে।
ভাতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের SSC প্যানেলের প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়। এর মধ্যে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বেতন পেলেও, গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট কোনও ঘোষণা করেনি। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারা গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
রাজ্য সরকারের ভাতা ঘোষণা
গত বুধবার (১৯ জুন, ২০২৫) নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুদান ঘোষণা করেন। তিনি জানান, “ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভলিহুড এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি” নামে একটি স্কিম তৈরি করা হয়েছে শ্রম দপ্তরের অধীনে। এর মাধ্যমে গ্রুপ সি কর্মীদের মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে এই অনুদান কার্যকর হবে এবং আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত এটি চালু থাকবে। তিনি আরও বলেন, “আদালতে যেহেতু মামলাটি বিচারাধীন আছে, আমরা রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছি। মামলা উঠলে আদালত যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে চলব। কিন্তু ততদিন এই সংসারগুলি কী করে চলবে? তাই আমরা একটা প্রকল্প তৈরি করেছি।”
হাইকোর্টে মামলার সূত্রপাত
রাজ্য সরকারের এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীরা মূলত ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের দাবি ছিল, রাজ্যের এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী এবং অযোগ্যদের এই ভাতা দেওয়া ঠিক নয়। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, কোন আইনে অযোগ্যদের ভাতা দেওয়া হবে এবং যদি ভাতা দিতেই হয়, তবে ওয়েটিং লিস্টে থাকা যোগ্য প্রার্থীদেরও ভাতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
হাইকোর্টের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও রায়দান স্থগিত
এর আগেও গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল, যেখানে বিচারপতি অমৃতা সিনহা ভাতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গত সোমবার (১৭ জুন, ২০২৫) এই ভাতা সংক্রান্ত শুনানিতে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি অমৃতা সিনহা মৌখিকভাবে জানান যে, এখনই কোনও ভাতা দেওয়া যাবে না। তিনি রাজ্যের কাছে প্রশ্ন তোলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কোনও রকম আলোচনা বা স্ক্রুটিনি ছাড়াই কেন এত তড়িঘড়ি এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? কেন এত তাড়াহুড়ো করছে রাজ্য সরকার? এরপর সেই দিনের জন্য রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছিল।
আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!
রায় ঘোষণা এবং ভাতার উপর স্থগিতাদেশ
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের তরফে জানানো হয় যে, শুক্রবার (২০ জুন, ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। শুক্রবারের রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দেয়। আদালত নির্দেশ দেয় যে, পরবর্তী কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত রাজ্য সরকার এই ভাতা প্রদান করতে পারবে না। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টের এই অন্তর্বর্তী রায় বহাল থাকবে। মামলাকারীদের আইনজীবী গোপা বিশ্বাস জানান, রাজ্যের এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থী।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক মামলা
এদিকে, ২০২৫ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করেও কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই মোতাবেক স্কুল সার্ভিস কমিশন নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি, যা আদালত অবমাননার শামিল। আগামী ৫ জুন বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হতে পারে।