ব্যুরো নিউজ ০৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২৫ : পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। একদিকে চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের এসএসসি ভবন অভিযানের অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট, অন্যদিকে চিহ্নিত অযোগ্য শিক্ষকদের নতুন করে পরীক্ষায় বসার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এই দুই বিপরীতধর্মী ঘটনা প্রমাণ করে যে, আদালতের অবস্থান স্পষ্ট—যোগ্যদের অধিকার রক্ষা করা হবে, কিন্তু অযোগ্যদের কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
আচার্য সদনে যাওয়ার অনুমতি পেলেন যোগ্য শিক্ষক নেতা
চাকরি ফেরতের দাবিতে সোমবার এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক নেতা সুমন বিশ্বাস। তবে পুলিশ তাঁদের মিছিলের অনুমতি দেয়নি এবং করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন থেকে সুমন বিশ্বাসকে আটক করে। এরপরই তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই মামলার শুনানিতে সুমন বিশ্বাসকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতর, আচার্য সদনে যাওয়ার অনুমতি দেন। আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, সুমন বিশ্বাসসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এসএসসি দফতরে গিয়ে তাঁদের দাবি পেশ করতে পারবেন। তবে আদালত মিছিল করার অনুমতি দেয়নি।
চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, এসএসসি যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করেছে, তবে অযোগ্যদের তালিকায় নাম কম। সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, যেহেতু যোগ্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাই তাঁদের আবার নতুন করে পরীক্ষায় বসার কোনো প্রয়োজন নেই।
SSC Scam : দাগী অযোগ্যদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে হাইকোর্টের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা
অযোগ্যদের আবেদন খারিজ, কড়া বার্তা হাইকোর্টের
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি সম্প্রতি ১৮০৬ জন অযোগ্য বা ‘দাগি’ শিক্ষকের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকা প্রকাশের পরই প্রায় ৩৫০ জন চিহ্নিত অযোগ্য শিক্ষক কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এবং নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরীক্ষায় বসার আবেদন জানান।
তাঁদের অভিযোগ ছিল যে, এসএসসি তাঁদের ‘দাগি’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও কলকাতা হাইকোর্ট আগে এমন কোনো রায় দেয়নি। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয় এবং অযোগ্যদের কঠোর ভর্ৎসনা করে। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল, “এত দিন কোথায় ছিলেন? যেই তালিকা প্রকাশিত হল, তখনই আদালতে চলে এলেন?” তিনি আরও বলেন, “যথেষ্ট হয়েছে আর নয়! সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তালিকা প্রকাশের পর কীভাবে বলতে পারেন যে আপনারা অযোগ্য নন?”
আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, এসএসসির প্রকাশিত চিহ্নিত অযোগ্যদের তালিকায় কোনো হস্তক্ষেপ করা হবে না এবং এই ‘দাগি’রা আর কোনো পরীক্ষায় বসতে পারবে না।
SSC Recruitment scam : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়াল তৃণমূলের আরেক মন্ত্রীর নাম , রাজ্যপাল দিলেন তদন্তের অনুমোদন
সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারেন অযোগ্যরা
এসএসসি প্রকাশিত অযোগ্যদের তালিকাটি অসম্পূর্ণ দাবি করে সুপ্রিম কোর্টেও মামলা দায়ের হতে চলেছে। আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানিয়েছেন যে, তালিকায় আরও অনেক অযোগ্য শিক্ষকের নাম নেই, এমনকি ২০১৬ সালের মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে যারা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাদের নামও বাদ পড়েছে। এই বিষয়ে তিনি শীঘ্রই সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। যদিও আজ সুপ্রিম কোর্টে এসএসসি তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে জানিয়েছে যে তারা সমস্ত দাগি বা অযোগ্যদের বাদ দিয়েছে।
সংক্ষেপে, এসএসসি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় আদালত এখন যোগ্যদের অধিকার রক্ষা এবং অযোগ্যদের সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে আইনি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।