ব্যুরো নিউজ ১০ নভেম্বর ২০২৫ : পরীক্ষা নেওয়ার ৫৪ দিনের মাথায় স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশিত হলো। জানা গেছে, অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরেই ফল প্রকাশ হলেও, প্রথমে কমিশনের ওয়েবসাইটে সমস্যা দেখা দেওয়ায় পরীক্ষার্থীদের ফল দেখতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। তবে পরে অবশ্য সেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
পরীক্ষায় কতজন ছিল ও শূন্যপদ
২০১৬ সালের চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য এই বছর পুনরায় এসএসসি পরীক্ষার আয়োজন করে। চলতি বছরের ১৪ই সেপ্টেম্বর একাদশ ও দ্বাদশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
- শূন্যপদ: একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট ১২ হাজার ৫১৪টি শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে।
- আবেদনকারী: এই পরীক্ষাটিতে আবেদন করেছিলেন ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন।
- পরীক্ষা: এসএসসি মোট ৬০ নম্বরের পরীক্ষা নিয়েছিল।
- ফলাফল দেখার পদ্ধতি: কমিশনের ওয়েবসাইট westbengalssc.com -এ লগ ইন করে প্রত্যেক প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাওয়া নম্বর দেখতে পারবেন বলে কমিশন জানিয়েছে।
SSC Scam : দাগী অযোগ্যদের নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে হাইকোর্টের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা
শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ বার্তা
ফল প্রকাশের পরপরই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক্স হ্যান্ডেলে চাকরিহারা প্রার্থীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা পোস্ট করেন। তিনি সেখানে লেখেন:
“দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রতিটি পদক্ষেপই হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়ম মেনে।”
পরীক্ষা দিয়েও ‘অনুপস্থিত’, হাই কোর্টে কারাবন্দী প্রার্থী
এসএসসি-র এই ফল প্রকাশের পর পরই একটি নতুন বিতর্ক সামনে এসেছে। সেপ্টেম্বরে হওয়া স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট (SLST)-এ বসা সত্ত্বেও একজন চাকরিপ্রার্থীর নাম ফলাফলে না থাকায় তিনি কলকাতা হাই কোর্টে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
- প্রার্থীর পরিচয়: ঐ প্রার্থীর নাম আব্দুল সাত্তার। তিনি বর্তমানে বীরভূম জেলার বোলপুর সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আছেন।
- ফলাফল: ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায়, লিখিত পরীক্ষায় তাঁকে ‘অনুপস্থিত’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
- আইনজীবীর প্রশ্ন: রবিবার সাত্তারের আইনজীবী ফিরদৌস শামীম জানিয়েছেন যে, তিনি সোমবারই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা-র দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছেন, “তাঁদের মক্কেলের জায়গায় অন্য কে পরীক্ষা দিল?”
- আদালতের আশ্বাস: আইনজীবী শামীম বলেন, পরীক্ষার পর মামলার শুনানিতে রাজ্য জানিয়েছিল যে, তাঁর মক্কেলের উত্তরপত্রগুলি একটি নির্দিষ্ট লক নম্বর সহ পাঠানো হয়েছে এবং রাজ্যের পক্ষের আইনজীবীও আদালতে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে উত্তরপত্রগুলি নির্দিষ্ট স্থানে সুরক্ষিত আছে। কিন্তু প্রকাশিত SLST ফলে আব্দুল সাত্তারকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। এই ঘটনায় আইনজীবী শামীম স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
শিক্ষক নিয়োগে প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় চলছিল। তারই প্রেক্ষাপটে এই নতুন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো।
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ: গত ৩রা এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিযুক্ত হওয়া প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর নিয়োগ বাতিল করে দেয়।
- নতুন পরীক্ষা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই নতুন করে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সর্বোচ্চ আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছিল যে, ২০১৬ সালের ত্রুটিপূর্ণ প্যানেলের অযোগ্য প্রার্থীরা যেন নতুন পরীক্ষায় বসতে না পারে।
- মোট শূন্যপদ: নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৩৫,৭২৬টি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য নয় বছর পর SLST অনুষ্ঠিত হলো। এর মধ্যে নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ২৩,২১২টি এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ১২,৫১৪টি পদ রয়েছে।
