ব্যুরো নিউজ, ৮ ফেব্রুয়ারি: “ওম জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে। বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোস্তুতে।”
প্রত্যেকবছর বসন্ত পঞ্চমীতে করজোড়ে সমস্বরে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে আমরা স্মরন করি জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীকে। এই দিনটিকে বিদ্যার অর্জনের ক্ষেত্রে শুভ দিন হিসেবে ধরা হয়। হাতেখড়ি সংযোগে শুরু হয় শিক্ষাজীবনে প্রথম পথ চলা। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধুমধাম করে এই পুজো করা হয়। পুজোর শেষে খাওয়াদাওয়ার আয়োজনও করা হয়ে থাকে। সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি যদিও বসন্ত পঞ্চমীর অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। স্কুল থেকে দল বেঁধে ঠাকুর পছন্দ করতে যাওয়া, তারপর সেই ঠাকুরের বায়না নির্ধারণ করা, পুজোর জায়গা পরিষ্কার করে ফুল ও মালা সংযোগে সেই জায়গা সাজানো থেকে শুরু করে ওইদিন সমস্ত কাজেই ছাত্র ছাত্রীদের উৎসাহ থাকে তুঙ্গে।
বসন্ত পঞ্চমীতে সরস্বতী পুজো করার কারণ
তবে সকলের মনে একটা প্রশ্নের উদয় হতেই পারে যে কেন বসন্ত পঞ্চমীর বিশেষ দিনেই পূজিত হন মা সরস্বতী? তার পিছনেও রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। সেই কাহিনি অনুযায়ী, সৃষ্টির সূচনার সময় বিষ্ণুর আদেশে মনুষ্য যোনি থেকে শুরু করে অন্যান্য জীব রচনা করেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। তবে তিনি তার ওই রচনায় অসন্তুষ্ট ছিলেন। চারিদিকের নিস্তব্ধতা তাঁকে চিন্তিত করে তুলেছিল। এর পরই বিষ্ণুর আশীর্বাদে ব্রহ্মা নিজের কমন্ডল থেকে জল নিয়ে পৃথিবীতে ছিটিয়ে দেন। কমন্ডলের সেই জল মাটিতে পড়তেই একটি কম্পন সহযোগে এক চতুর্ভূজী অদ্ভূত স্ত্রী শক্তির সৃষ্টি হয়। সেই শক্তির একহাত ছিল বর মুদ্রা ভঙ্গিতে ও আর এক হাতে ছিল বীণা, তাঁর অন্য দুই হাতে যথাক্রমে ছিল স্ফটিক মালা ও বেদ পুস্তক। তাঁর বাহন রাজহংস। সেই রাজহংসের উপর তিনি বসেছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ দুই ঘাটের ফেরি চলাচল | ক্ষোভে যাত্রীরা
ব্রহ্মা সেই স্ত্রী শক্তির কাছে বীণা বাজানোর জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বীণা বাজালে বীণার মধুর শব্দে সংসার প্রান ফিরে পায়। এরপর প্রজাপতি ব্রহ্মা সেই স্ত্রী শক্তির নাম রাখেন বানীর দেবী সরস্বতী রূপে। বাগ্দেবী, ভগবতী, শারদা, বীণাপাণি, বীণাবাদিনী নামে পরিচিত হন মা সরস্বতী। তিনি বিদ্যা ও বুদ্ধি প্রদান করেন। তাঁর থেকেই সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছে বলে পুরাণে উল্লেখ আছে। সেই কারণে মা সরস্বতীকে সঙ্গীতের দেবীও বলা হয়। উল্লেখ্য, যে তিথিতে বাগদেবী সরস্বতীর উৎপত্তি হয়, সেই তিথিটিই ছিল বসন্ত পঞ্চমী। পুরাণে উল্লেখ করা আছে, বাগদেবী সরস্বতীর উপর মুগ্ধ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, বসন্ত পঞ্চমীর শুভ তিথিতে যারা নিষ্ঠার সাথে মা সরস্বতীর পুজো করবে তাঁরা বিদ্যা ও শিল্পে নিপুণ হবে। সেই কারনেই প্রতি বছর বসন্ত পঞ্চমীর বিশেষ দিনেই বাগদেবীর আরাধনা হয়ে থাকে। ইভিএম নিউজ