ব্যুরো নিউজ,২১ এপ্রিল: মহাকাশ অভিযানের কথা ভাবলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে উচ্চপ্রযুক্তি, স্পেসস্যুট, রকেট, আর নির্ভীক নভোশ্চরদের ছবি। তবে যাঁরা পৃথিবীর বাইরে দীর্ঘদিন থাকেন, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা কেমন, তা নিয়ে কজনই বা ভাবেন? মহাকাশে যেমন খাওয়া জরুরি, তেমনই শরীরের রেচন প্রক্রিয়াও অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু সেখানে নেই মাধ্যাকর্ষণ, ফলে প্রস্রাব বা মলত্যাগ করাও হয়ে ওঠে এক জটিল চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জই কখনও কখনও ইতিহাসে এক মজার মোড় এনে দিয়েছে।
মহাকাশে প্রস্রাবের অদ্ভুত ইতিহাস
১৯৬১ সালে নাসার প্রথম মহাকাশযাত্রা ঘিরে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার ঠিক আগে, লঞ্চপ্যাডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে করতে নিজের প্যান্টেই প্রস্রাব করতে বাধ্য হন আমেরিকার প্রথম মহাকাশচারী অ্যালান শেপার্ড। ইতিহাসে মানুষের প্রথম মহাকাশ ছোঁয়ার মুহূর্তটি হয়ে ওঠে এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। এই ঘটনার পরেই নাসা বুঝতে পারে, মহাকাশযানে শৌচব্যবস্থা থাকা কতটা জরুরি।
মমতার খামে রাজনৈতিক কৌশল? দিলীপের দরজায় পৌঁছল নবান্ন!
পরবর্তী সময়ে নাসার বিজ্ঞানীরা পুরুষ নভোশ্চরদের জন্য তৈরি করেন এক বিশেষ ব্যবস্থা— ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’। এটি মূলত কন্ডোমের মতো একটি প্লাস্টিক কাভার, যা যৌনাঙ্গে লাগিয়ে প্রস্রাব একটি নলের মাধ্যমে স্পেসস্যুটের বিশেষ ব্যাগে জমা রাখা হতো। এতে মাধ্যাকর্ষণ না থাকলেও প্রস্রাব মহাকাশযানে ভেসে বেড়াত না। তবে এতে সমস্যাও ছিল। সকলের জন্য একটি আকার কার্যকর না হওয়ায় অনেক সময় ফুটো হয়ে যেত, তৈরি হতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। তাই নাসা পরবর্তীতে তিনটি ভিন্ন মাপ— ছোট, মাঝারি এবং বড়— তৈরি করতে বাধ্য হয়। নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী রাস্টি শোইকার্ট মজা করে বলেন, “মাপ বেছে নেওয়ার সময় সবাই বড়টাকেই পছন্দ করত!”
এই সীমাবদ্ধতার কারণে ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’ পদ্ধতি বাতিল করে নাসা আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন শৌচব্যবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে ব্যবহার হওয়া যন্ত্রগুলি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য উপযোগী। এতে ক্যাথেটার, পরিশ্রাবণ পদ্ধতি এবং নিরাপদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা একত্রে থাকে। প্রস্রাব ত্যাগের মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যখন শূন্য মাধ্যাকর্ষণে কঠিন হয়ে ওঠে, তখনই বোঝা যায় মহাকাশে বেঁচে থাকার লড়াই কতটা কঠিন ও প্রযুক্তিনির্ভর। তবে সেই ‘কন্ডোম ক্যাথেটার’ থেকে আজকের উন্নত প্রযুক্তি— নাসার এই যাত্রাই বলে দেয়, চ্যালেঞ্জ যতই হোক, সমাধান বিজ্ঞানই খুঁজে নেয়।