ব্যুরো নিউজ ৭ আগস্ট ২০২৫ : রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী এবং মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সম্প্রতি একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন। একদিকে মন্তেশ্বর থানার আইসি-কে সরাসরি হুঁশিয়ারি, অন্যদিকে নিজের দলের কর্মীদের কাছেই কালো পতাকা ও গো-ব্যাক স্লোগান— সব মিলিয়ে মন্তেশ্বরের রাজনীতিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা নেতৃত্ব।
আইসি-কে থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি
শুরুর দিকে, মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী মন্তেশ্বর থানার আইসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন। মন্তেশ্বরের সাতগাছিয়ার বিধায়ক কার্যালয় থেকে তিনি সরাসরি থানা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন। মন্ত্রীর অভিযোগ ছিল, আইসি রাতে সাধারণ মানুষের বাড়িতে লাঠি দিয়ে দরজায় আঘাত করে তল্লাশি চালাচ্ছেন, যা মানুষকে আতঙ্কিত করছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, আইসি একতরফাভাবে কাজ করছেন এবং গোষ্ঠীস্বার্থে প্রভাবিত হচ্ছেন। এর জন্য তিনি নাম না করে মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমদ হোসেন শেখকেও নিশানা করেন। মন্ত্রীর এই মন্তব্যের ফলে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও, পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মন্ত্রী জানান, গত ৩ জুলাই তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র কুসুমগ্রামে আক্রমণের ঘটনা নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার, মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। সেই ঘটনায় তাঁর কনভয় আটকে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল। এরপরই তিনি মন্তেশ্বর থানার আইসি-কে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন, কারণ তিনি উপযুক্ত নিরাপত্তা দিতে পারেননি। মন্ত্রীর মতে, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
‘সিদ্দিকুল্লাকে চাই না’ স্লোগান ও কালো পতাকা
অন্যদিকে, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিজ দলের কর্মীদের ক্ষোভও প্রকাশ্যে আসে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে না চাওয়ার স্লোগান তুলে দেলুরে প্রধান, উপপ্রধানসহ কর্মীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমদ হোসেন শেখও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে, তিনি দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না এবং নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষকে কোনো পরিষেবা দেন না।
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে নিজের এলাকাতেই কালো পতাকা ও ঝাঁটা দেখতে হলো। বৃহস্পতিবার সকালে সভাস্থল পরিদর্শনে গেলে মন্তেশ্বরের মালডাঙা ও মন্তেশ্বর বাজারের মাঝামাঝি জায়গায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ তাঁকে কালো পতাকা দেখিয়ে ‘সিদ্দিকুল্লা মন্তেশ্বরে তোমাকে চাই না’ বলে স্লোগান দেয়। বিক্ষোভকারীরা তাঁকে ‘ধান্দাবাজ’, ‘চিটিংবাজ’ ও ‘তোলাবাজ’ বলেও কটাক্ষ করে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তিনি একজন ‘পরিযায়ী বিধায়ক’, যিনি এলাকার মানুষের পাশে থাকেন না।
মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রফিকুল ইসলাম শেখ অভিযোগ করেন, “উনি তোলা ছাড়া কিছুই বোঝেন না। আমরা একজন মন্ত্রী পেয়েও কোনো পরিষেবা পাইনি।” তিনি আরও বলেন যে, মন্ত্রী চার বছর পর এখানে দালালির জন্য এসেছেন।
দলের অস্বস্তি ও নেতৃত্বের বক্তব্য
নিজের দলের কর্মীদের এমন আচরণের পর ক্ষুব্ধ মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী জানান, তিনি এই বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন। তাঁর দাবি, এই ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং এটি একটি চক্রের কাজ, যারা তাঁর তোলাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগের জন্য এই ধরনের কাজ করছে।
এদিকে, এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক দেব টুডু বলেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসে কোনো গোষ্ঠী বা দ্বন্দ্ব নেই, মতবিরোধ থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হয়। অন্যদিকে, বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র এই ঘটনার সমালোচনা করে বলেছেন যে, যখন একজন মন্ত্রীই পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না, তখন সাধারণ মানুষের কী হবে। যদিও তৃণমূল জেলা সহ-সভাপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের টিকিট নির্ভর করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর, তাই এখন থেকে বিক্ষোভ করে লাভ নেই।