ব্যুরো নিউজ ১২ জুন : বুধবার সকালে দক্ষিণ কলকাতার গল্ফগ্রিন এলাকা থেকে পর্ন-কাণ্ডে অভিযুক্ত আরিয়ান খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তাকে ডোমজুড় থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে তার বোন জোয়া খানকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থেকে পাকড়াও করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পানিহাটির এক তরুণীকে হাওড়ার বাঁকড়ার ফ্ল্যাটে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, পর্নোগ্রাফি শুট করতে রাজি না হওয়ায় ওই তরুণীর উপর অত্যাচার চালানো হয় এবং তার মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। জানা যায়, শ্বেতা ওই তরুণীকে কুলু ও মানালিতেও নিয়ে গিয়েছিল, যেখানে তার ২ বছরের সন্তানের দেখভালের অজুহাতে তাকে দিয়ে বিভিন্ন কাজ করানো হত। নির্যাতিতা তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সাগর দত্ত হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ড থেকে আইসিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে তার মাথায় গুরুতর আঘাত এবং পেটে সমস্যার চিকিৎসা চলছে।
শ্বেতা খানের গ্রেফতারি ও পুলিশের তৎপরতা
প্রাথমিক তদন্তে আরিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তার মা শ্বেতা খান ওরফে ‘ফুলটুসি’-র হদিশ পায়। আরিয়ানের ফোন ট্র্যাক করে শ্বেতার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় হাওড়া সিটি পুলিশ দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের গোপালনগর মোড় থেকে শ্বেতাকে গ্রেফতার করে। এই গ্রেফতারি পর্নোগ্রাফি চক্র এবং মধুচক্রের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
শ্বেতা খানের অতীত ও রাজনৈতিক যোগসূত্র
‘ফুলটুসি’ নামে পরিচিত শ্বেতা খান এবং তার ছেলে আরিয়ানের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং নিত্যনতুন ক্লাবিং ও নাইট আউটের ছবি তদন্তকারীদের স্ক্যানারে নিয়ে আসে। জানা যায়, শ্বেতা ফেসবুকে নিজেকে তৃণমূল কর্মী হিসেবে দাবি করতেন এবং তার ফেসবুক প্রোফাইলে তৃণমূলের প্রথম সারির রাজনীতিবিদ যেমন অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার ছবি বিদ্যমান। এমনকি, তাকে তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের মিছিলেও এবং দেওয়াল লিখন করতেও দেখা গেছে। অভিযোগ উঠেছে যে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের আড়ালে হাওড়ার ডোমজুড়ে মা-ছেলে মিলে সফট পর্ন চক্র চালাত।
রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া , তৃনমূলের তোষণনীতির উদাহরণ
শ্বেতার সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের ছবি প্রকাশ্যে আসার পর রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা শুরু হয়। তৃণমূলের হাওড়ার চেয়ারম্যান অরূপ রায় বলেন, “কারও সঙ্গে ছবি থাকতেই পারে, তাতে কিছু যায় আসে না। এসব মেয়েরা প্রভাব খাটানোর জন্য এসব করতে পারে। দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। যদি দলে থাকে তাহলে দল থেকে তাড়াব।” প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এক সময় ডোমজুড় কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলাম, নানা অনুষ্ঠানে যেতাম। কে কখন ছবি তুলেছে বলতে পারব না।”
হাওড়ার ডোমজুড় থানার বাঁকড়া দেওয়ান পাড়ায় একটি চারতলা ফ্ল্যাটের একতলায় শ্বেতা ও আরিয়ান বসবাস করত। ঘটনার পর থেকে সেই ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে। এলাকাবাসীর দাবি, আরিয়ান এবং শ্বেতা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ছিল এবং নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিল। তাদের ভয়ে এলাকার লোকজন ত্রস্ত থাকত এবং কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিত। পড়শিরা আরও জানান যে, রাতে ওই ফ্ল্যাটে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির আনাগোনা ছিল।
নির্যাতিতার মায়ের আবেদন এবং নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থা
এদিকে, পানিহাটি-কাণ্ডে নির্যাতিতা তরুণীর মা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে মেয়ের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছেন। তিনি চিঠিতে মেয়ের উপর নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য অনুরোধ করেছেন।
নির্যাতিতা যুবতীর শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়েছে। তাকে সাগর দত্ত হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়ার্ড থেকে আইসিসিইউ (ICCU)-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তার মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে খবর। এছাড়াও, তার পেটেও সমস্যা রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্যাতিতার এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন যে তিনি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন। আঘাতের বিস্তারিত বিবরণ অনুযায়ী, নির্যাতিতার মাথায় এবং শরীরের একাধিক অংশে গুরুতর আঘাত রয়েছে। এর পাশাপাশি, তার গোপনাঙ্গেও গভীর ক্ষত রয়েছে। তার দাঁত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই আঘাতগুলির জন্য তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
