ব্যুরো নিউজ ৩ জুন : সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পানোলির গ্রেফতারি এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলাকারী ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে হিন্দু দেব-দেবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের অভিযোগ ঘিরে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠছে, কারণ আসাম পুলিশ কামাখ্যা দেবী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে ওয়াজাহাত খানকে আসামে আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন, যেখানে কলকাতা পুলিশ এখনও ওয়াজাহাতের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও।
শর্মিষ্ঠা পানোলির গ্রেফতারি ও বিতর্ক
গত শুক্রবার গভীর রাতে গুরগাঁও থেকে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন শর্মিষ্ঠা পানোলি। তাঁকে কলকাতায় এনে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পানোলির পোস্ট করা একটি ভিডিও ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত হয়, যেখানে তিনি তীব্র ভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুসলিম সেলেব্রিটিদের ‘ নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যদিও তিনি পরে ভিডিওটি মুছে ফেলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন , তাঁর গ্রেফতারি রবিবার গোটা দেশে, প্রবল বিতর্কের জন্ম দেয়। তাঁরা পানোলির মুক্তির দাবি তোলেন এবং তাঁর গ্রেফতারির পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ও তার নিখোঁজ হওয়ার দাবি
শর্মিষ্ঠা পানোলির বিরুদ্ধে মামলাকারী ওয়াজাহাত খান নিজেই এখন ঘৃণামূলক মন্তব্য এবং হিন্দু দেব-দেবী সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্যের অভিযোগে অভিযুক্ত। অভিযোগ, কলকাতা-ভিত্তিক এই ব্যক্তি, যিনি রশিদি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত, ১ জুন সোশ্যাল মিডিয়ায় হিন্দু বিশ্বাস ও দেব-দেবী সম্পর্কে ধারাবাহিক উসকানিমূলক ও অবমাননাকর মন্তব্য পোস্ট করেছেন। এর মধ্যে আসামের কামাখ্যা মন্দির সম্পর্কে একটি মন্তব্য বিশেষভাবে আপত্তিকর এবং ধর্ম অবমাননাকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে, ওয়াজাহাত খানের পরিবার দাবি করেছে যে, তিনি ১ জুন রাত থেকে নিখোঁজ। তাঁর বাবা সাদাত খান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পানোলির গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁদের পরিবার হুমকি ফোন পাচ্ছে এবং তাঁর ছেলে কোনো ধর্ম সম্পর্কে অসম্মানজনক কিছু পোস্ট করতে পারে না। তিনি মনে করছেন যে ওয়াজাহাতের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকতে পারে এবং গত কয়েকদিনে আসা আপত্তিকর ও হুমকিসূচক কলের কারণে তাঁর ছেলে মানসিক চাপে ছিল। সাদাত খান নিজেও একই ধরনের ফোন ও গালিগালাজের শিকার হয়েছেন।
আসাম পুলিশের তৎপরতা বনাম কলকাতা পুলিশের নীরবতা
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার কামাখ্যা দেবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যকারী অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আসামে আনার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা গণমাধ্যমকে জানান, “দেবী মা কামাখ্যা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আসাম পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতা চাইব যাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আসামে এনে আইনের মুখোমুখি করা যায়।”
অন্যদিকে, ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে শ্রী রাম স্বাভিমান পরিষদ। অভিযোগটি গার্ডেনরিচ থানায় জমা পড়েছে, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগপত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৯৯৬(১)(এ), ২৯৯, ৩৫২, ৩৫৩(১)(সি) ধারা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬এ ও ৬৭ ধারায় এফআইআর দায়ের করার আবেদন জানানো হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, খান হিন্দুদের উদ্দেশ্যে কুরুচিকর শব্দ ব্যবহার করেছেন এবং ধর্মীয় উৎসব নিয়ে অশ্লীল ভাষায় কটাক্ষ করেছেন। এতে জনশান্তি ব্যাহত হচ্ছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে শত্রুতা বাড়ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, এই গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও কলকাতা পুলিশ এখনও পর্যন্ত ওয়াজাহাত খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেফতার করেনি, এমনকি তাঁর নিখোঁজ হওয়ার দাবি সত্ত্বেও কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি।
কলকাতা পুলিশের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
শর্মিষ্ঠা পানোলি বিতর্কিত মন্তব্য করলেও, তিনি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যেখানে ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অভিযোগ উঠেছে। এর পরও কলকাতা পুলিশের পানোলির বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে আপাত নীরবতা , পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগকে আরও জোরালো করছে। কলকাতা পুলিশ এক বিবৃতিতে ‘ঘৃণাভাষণ এবং গালিগালাজকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে ভাবা ঠিক নয়’ বলে জানিয়েছিল, যার মাধ্যমে তারা শর্মিষ্ঠা পানোলির গ্রেফতারিকে সমর্থন করে। কিন্তু এই একই মানদণ্ড কেন ওয়াজাহাত খানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আসাম পুলিশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক মন্তব্যের ভিত্তিতে সমন জারি করে তাকে আসামে আনার জন্য তৎপরতা দেখালেও, কলকাতা পুলিশের এই ধরনের ঘৃণামূলক মন্তব্যের অভিযোগ সত্ত্বেও নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই ঘটনাগুলি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।