ব্যুরো নিউজ ৫ জুন : ২২ বছর বয়সী আইনের ছাত্রী এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পনৌলির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মনজুর করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি রাজা বসু শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিন আবেদনের শুনানি করেন। এই জামিন ঘিরে সমাজে বাক স্বাধীনতার অধিকার এবং তার সীমা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
হাইকোর্টের কঠোর শর্তাবলী ও ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা
শর্মিষ্ঠাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার সময় কলকাতা হাইকোর্ট বেশ কয়েকটি কঠোর শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে প্রধান হলো, আদালত শর্মিষ্ঠার বিদেশ যাত্রায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, প্রধান বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) অনুমতি ছাড়া শর্মিষ্ঠা কোনোভাবেই দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এছাড়াও, জামিনের জন্য তাঁকে ১০,০০০ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
নিরাপত্তার অভিযোগ এবং পুলিশের প্রতি নির্দেশ
গ্রেফতারের আগে শর্মিষ্ঠার নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পর তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত কলকাতা পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এটি বাক স্বাধীনতার চর্চার ক্ষেত্রে নাগরিকদের নিরাপত্তার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
বাক স্বাধীনতার সীমা: হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ
এর আগে, মঙ্গলবার শর্মিষ্ঠার জামিন আবেদনের শুনানির সময় হাইকোর্ট তাঁর আইনজীবীকে প্রশ্ন করে যে, বিতর্কিত ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছিল, যা ‘একটি নির্দিষ্ট অংশের অনুভূতিতে আঘাত করেছে’ বলে অভিযোগ উঠেছে।’ এটি একটি উদার সমাজে বাক স্বাধীনতার সীমারেখা এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
পুলিশের গ্রেফতারের অধিকার: আইনি ব্যাখ্যা
আদালত আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, অভিযুক্ত অপরাধের সাজা ৭ বছরের কম হলেও পুলিশের যে কাউকে গ্রেফতার করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। বেঞ্চ বলেছে, ‘যদি অভিযুক্ত অপরাধের সাজা ৭ বছরের কম হয়, তার মানে এই নয় যে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫ ধারার কোনও শর্ত পূরণ হলে, পুলিশ চাইলে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে, প্রথমে ধারাগুলি পড়া উচিত।’ এটি পুলিশের ক্ষমতা এবং আইনি প্রক্রিয়ার সঠিক ব্যবহারের উপর আলোকপাত করে। যদিও বা পশ্চিমবঙ্গের পুলিসি নিস্ক্রিয়তা এবং পক্ষপাত প্রসঙ্গ একই আদালতে বহু মামলায় ধীকৃত !
সামাজিক সম্প্রীতি ও মামলার নিষ্পত্তি
হাইকোর্ট আরও বলেছে যে, এই ধরনের মন্তব্য করার সময় যেকোনো ব্যক্তির সতর্ক থাকা উচিত, কারণ আমাদের দেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়, বর্ণ এবং ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে। এই ধরনের মন্তব্যের পরিণতি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শর্মিষ্ঠা পনৌলির বিরুদ্ধে কলকাতার গার্ডেনরিচ থানায় দায়ের করা মামলাটিই মূল মামলা হিসেবে বিবেচিত হবে, কারণ এটিই প্রথম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা অন্যান্য সমস্ত মামলার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ থাকবে। গার্ডেনরিচের মামলাকারি নিজেই ভিন্ন রাজ্যে একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত থাকার দায় আপাতত ফেরার ।