ব্যুরো নিউজ ৩১ অক্টোবর ২০২৫ : ২০১২ সালের কুখ্যাত পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় (2012 Park Street Gangrape Case) দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটা আসামি নাসির খানের বিরুদ্ধে ফের এক যুবতীকে যৌন হেনস্থা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাজাভোগের পর সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পাওয়া এই ব্যক্তির স্বভাব সংশোধনাগারেও বদলায়নি বলেই অভিযোগ। ঘটনাস্থল কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলের নাইটক্লাব।
কী ঘটেছে নাইটক্লাবে?
জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতিতা তাঁর স্বামী, ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে ওই নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, সেখানেই নাসির খান এবং তার সঙ্গী জুনেইদ খানের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। বচসা চরমে উঠলে অভিযুক্তরা দলবদ্ধভাবে হামলা চালায়।
নির্যাতিতা বিধাননগর দক্ষিণ থানায় (Bidhannagar South Police Station) অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “ওরা বোতল নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। ওরা আমার শরীরে আপত্তিজনকভাবে হাত দেওয়ার চেষ্টাও করে।” নির্যাতিতার ভাই বচসা থামাতে গেলে অভিযুক্তরা বোতল নিয়ে হামলা চালায়। এরপর যখন নির্যাতিতা ও তাঁর সঙ্গীরা পালাতে যান, তখন অভিযুক্তরা আরও প্রায় ২০ জনকে ডেকে এনে তাঁদের উপর চড়াও হয়।
BJP Rally : নারী নির্যাতন, SIR এবং ভবানীপুর: তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করার বার্তা দিয়ে রাজপথে বিজেপি!
বন্ধ দরজার আড়ালে আতঙ্ক
অভিযোগ উঠেছে, এই সময় আক্রান্তরা ১০০ নম্বরে ফোন করে পুলিশে খবর দিলেও, নাইটক্লাবের দরজা বন্ধ থাকার কারণে তাঁরা বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেননি। কোনোমতে একটি লিকার রুমে লুকিয়ে নিজেদের বাঁচান তাঁরা। পরে পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে।
পুলিশের তদন্ত ও মামলা
বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার জানিয়েছেন, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
- নাইটক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
- নির্যাতিতার বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে।
- অভিযুক্ত নাসির ও জুনেইদ খানের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (Bharatiya Nyaya Sanhita) ১২৬(২) (যৌন হেনস্থা), ১১৫(২), ১১৭(২), ৩৫১(২), ৩(৫) ও ৭৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
- শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়নি।
Durgapur Gangrape : দুর্গাপুর গণধর্ষণ মামলা: অভিযুক্তদের মধ্যে প্রাক্তন কর্মী ফিরদৌস শেখকে শনাক্ত করলেন নির্যাতিতা, জামিনের আবেদন খারিজ
সংশোধন হয়নি স্বভাবের: প্যারোলে মুক্তিপ্রাপ্ত
এই ঘটনাটি নাসির খানের অতীতের অপরাধের কারণে আরও বেশি উদ্বেগ তৈরি করেছে।
- ২০১২ পার্ক স্ট্রিট কাণ্ড: ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চলন্ত গাড়িতে এক মহিলার গণধর্ষণের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হন নাসির। তাঁর ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল।
- ‘ভালো ব্যবহার’: দীর্ঘ আট বছর পর ‘ভালো ব্যবহার’-এর কারণে প্রায় ৪০০ দিন সাজার মেয়াদ শেষের আগেই শনিবার (শনিবার) সে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে মুক্তি পায়।
- জেল থেকে মুক্তি: মুক্তির পর নাসির বলেছিল যে সে নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় এবং দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা ও তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়ার মতো জেলে শেখা কিছু অভ্যাস বজায় রাখতে চায়।
- বিতর্কিত মুক্তি: সাজা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ‘ভালো আচরণ’-এর কারণে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনা সামনে আসার পর প্রশ্ন উঠেছে, সংশোধনাগারে থাকলেই যদি কোনো দুষ্কৃতীর দুষ্কর্মের স্বভাব না বদলায়, তবে প্যারোল বা সাজার মেয়াদ কমানোর সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত? ‘স্বভাব যায় না মরলে’ এই প্রবাদ বাক্যটি যেন আবার সত্য হলো।
এই ঘটনার ফলে রাজ্যে এই ধরনের অপরাধীদের প্রতি কঠোর শাস্তি প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে আসছে ।
 
				
 
								 
								 
								
















