ব্যুরো নিউজ ৩ জুন : সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে নিজস্ব অভিব্যক্তি প্রকাশের মূল্য কতটা হতে পারে, তা আবারও সামনে আনল পাকিস্তানের এক মর্মান্তিক ঘটনা। ১৭ বছর বয়সী জনপ্রিয় টিকটক তারকা সানা ইউসুফকে তার ইসলামাবাদের বাড়িতে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা পাকিস্তানে তরুণ সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালীদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতার এক ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেছে এবং সারাদেশে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
টিকটক তারকা সানার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ
দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এবং সামা টিভির প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার ইসলামাবাদে সুম্বল থানা এলাকায় সানা ইউসুফকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়। সানা, যিনি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চিত্রল থেকে এসেছিলেন, তিনি তার টিকটক ভিডিওর মাধ্যমে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন এবং তরুণ দর্শকদের মধ্যে একটি পরিচিত মুখ ছিলেন।পুলিশ সূত্র উদ্ধৃত করে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানায়, একজন অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারী সানার বাড়িতে ঢুকে খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। সামা টিভি অবশ্য ভিন্ন একটি তথ্য দিয়েছে; তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্দেহভাজন ব্যক্তি সম্ভবত সানার বাড়িতে অতিথি হিসেবে এসেছিল। পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে চ্যানেলটি বলেছে: “সানার বাড়িতে একজন অতিথি এসেছিলেন, তিনিই তাকে গুলি করে হত্যা করেন এবং ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পুলিশ অভিযুক্তকে ধরার জন্য তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে।”
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
সানার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (PIMS)-এ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সক্রিয়ভাবে মামলাটির তদন্ত করছে, তবে এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রেফতার করা হয়নি এবং হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। এই হত্যাকাণ্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, সানার অসংখ্য অনুসারী বিচার দাবি করছেন।
পাকিস্তানে সোশ্যাল মিডিয়া-কেন্দ্রিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি
সানার হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সাথে জড়িত সহিংসতা এবং ঝুঁকির এক ক্রমবর্ধমান প্রবণতার সর্বশেষ উদাহরণ। এটিই প্রথম ঘটনা নয় যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যকলাপের জেরে একজন তরুণীর জীবন কেড়ে নেওয়া হলো।
এর আগেও এই বছর এআরওয়াই নিউজ জানিয়েছিল যে, কোয়েটাতে ১৫ বছর বয়সী হীরা নামের এক কিশোরীকে তার বাবা ও মামা মিলে টিকটক ব্যবহারের অভিযোগে ‘অনার কিলিং’-এর শিকার করেছিলেন। হিরার বাবা আনোয়ারুল-হক, মেয়ের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপের জন্য ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং তাকে ভিডিও পোস্ট করা বন্ধ করতে বলেছিলেন। যখন সে অস্বীকার করে, তখন সে তার শ্যালক তায়াব আলীর সাথে তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা
এই ঘটনাগুলি সমাজে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির প্রভাব এবং তরুণদের জন্য এর সম্ভাব্য বিপদগুলি সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। একদিকে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি তরুণদের জন্য নিজেদের প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হয়ে উঠছে, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে এর ফলে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং ভার্চুয়াল জগতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তানের ছায়া ? শর্মিষ্ঠা পানোলি প্রসঙ্গ
অন্যদিকে, ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, সোশ্যাল মিডিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে একটি বিতর্ক চলমান রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার শর্মিষ্ঠা পানোলি বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গ্রেফতার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে মামলাকারী ওয়াজাহাত খান নিজেই এখন হিন্দু দেব-দেবী এবং ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং বর্তমানে নিখোঁজ। এই ঘটনায় আসাম পুলিশ ওয়াজাহাত খানকে আসামে আনার জন্য তৎপরতা দেখালেও, কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ওয়াজাহাত খানের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রেফতার বা পদক্ষেপের খবর পাওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
সানার হত্যাকাণ্ড মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চেয়েও জীবন ও নিরাপত্তার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘনকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত সুরক্ষার প্রস্ন তুলে ধরে।