ব্যুরো নিউজ ৬ আগস্ট ২০২৫ : প্রবীণ আদিবাসী নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরবিন্দ নেতাম মঙ্গলবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন যে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের উদ্বেগগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে উপেক্ষা করছে। জগদলপুরে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে নেতাম বলেন, অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠীগুলো নীতিগত মনোযোগ এবং সংবাদমাধ্যমের কভারেজ পেলেও আদিবাসীদের কণ্ঠস্বর প্রায়শই শোনা যায় না। তিনি বলেন, “সংসদ থেকে শুরু করে রাস্তায়, জাতীয় আলোচনায় বেছে বেছে কিছু বিষয় প্রাধান্য পায়, কিন্তু আদিবাসীদের প্রকৃত সমস্যাগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়।”
বস্তারে সংগঠিত ধর্মন্তকরণ নিয়ে উদ্বেগ
বস্তার এবং আবুজমাড়ে সংগঠিত ধর্মন্তকরণের অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতাম দাবি করেন, কিছু খ্রিস্টান মিশনারি গোষ্ঠী কল্যাণমূলক পরিষেবার আড়ালে বিদেশি তহবিল ব্যবহার করে ধর্মন্তকরণ চালাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই ধরনের কার্যকলাপ আদিবাসী সমাজের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক কাঠামোকে নষ্ট করছে।”
এই ধরণের গতিবিধি পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চলেও লখ্য করা গেছে – যেমন ঝাড়গ্রাম , বাঁকুড়া এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জনবসতি অঞ্চলে ।
আরএসএস-এর প্রশংসা
এই প্রসঙ্গে নাগরিক সমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরে নেতাম বলেন, “বাধ্যতামূলক ধর্মন্তকরণের বিরুদ্ধে আদিবাসী অঞ্চলে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS) নিয়মিতভাবে কাজ করছে।” তিনি সম্প্রতি নাগপুরে একটি আরএসএস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন, যেখানে তিনি ধর্মন্তকরণের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন এবং বস্তারে আদিবাসীদের পরিচয় ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা
সুপ্রিম কোর্টের একটি সাম্প্রতিক রায়ের বিষয়েও নেতাম গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে কন্যাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। নেতাম যুক্তি দিয়েছেন যে আদিবাসী প্রথাগত আইন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো বিবেচনা না করে যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে তা সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আদালতের রায়ের মাধ্যমে পরিবর্তন চাপিয়ে দেওয়ার আগে আমাদের ঐতিহ্য, গোষ্ঠীভিত্তিক ভূমি ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো ভালোভাবে বোঝা উচিত।”
তহবিলের স্বচ্ছতা ও আইনের প্রতি সম্মান
আদিবাসী কল্যাণে ব্যয় এবং বিদেশি মিশনারি তহবিলের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অরবিন্দ নেতাম। তিনি জানতে চেয়েছেন, “সরকারি প্রকল্পগুলো কি এতই অকার্যকর যে আমাদের মানুষদের বাইরের সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হবে?” তিনি বিচার বিভাগ এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আদিবাসী আইন, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় রীতিনীতিকে সম্মান করা হয়। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে তা করতে ব্যর্থ হলে আদিবাসী সমাজে বিচ্ছিন্নতা এবং আইনি বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।