ব্যুরো নিউজ ১০ জুন : আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চিকিৎসক আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রলয় বসুর আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যু রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সোমবার, ৯ জুন, বেহালার বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর থেকেই চিকিৎসক মহল এবং সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এই ঘটনা ঘিরে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত ও দেহ উদ্ধার
৯ জুন, সোমবার সকালে বেহালার নিজ বাসভবন থেকে ৪৯ বছর বয়সী ডাঃ প্রলয় বসুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এই ঘটনাটি তাঁর পরিবার এবং চিকিৎসক বন্ধুদের মধ্যে গভীর শোক ও বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে
ডাঃ প্রলয় বসুর পরিচয় ও আন্দোলনকারী সত্তা
ডাঃ প্রলয় বসু ছিলেন একজন পরিচিত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান (RMSP) ও বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (VIMS) থেকে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। একসময় এম আর বাঙুর হাসপাতালে কর্মরত থাকলেও পরে চাকরি ছেড়ে ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস শুরু করেন।
আরজি কর হাসপাতালের এক তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা ‘অভয়া মঞ্চ’ সহ একাধিক চিকিৎসক মঞ্চের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন তিনি। এই আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় এবং প্রতিবাদী ভূমিকা ছিল সর্বজনবিদিত। ঘটনার ঠিক দশ মাস পূর্ণ হওয়ার দিনেই তাঁর মৃত্যু, যা অনেকের কাছেই কাকতালীয় নয়।
মৃত্যুর কারণ ঘিরে প্রাথমিক জল্পনা
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ডাঃ প্রলয় বসু মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এবং সেই কারণেই আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। পরিবার সূত্রেও জানা গেছে, গত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং দুজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রী জিনিয়া বসুও পেশায় একজন রেডিওলজিস্ট। এই ধরনের মানসিক অসুস্থতার দিকটি পুলিশ তদন্তে গুরুত্ব দিচ্ছে।
চিকিৎসক মহলে গভীর উদ্বেগ ও কাঠামোগত ব্যর্থতার অভিযোগ
ডাঃ প্রলয় বসুর আকস্মিক মৃত্যুতে চিকিৎসক মহলে গভীর উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক চিকিৎসক মনে করছেন, আরজি করের সেই ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ডাঃ প্রলয় বসুর মনস্তত্ত্বের উপর পড়েছিল, যা হয়তো একটি অপরিবর্তনীয় মানসিক ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার কর্তৃক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে চিকিৎসা পেশাজীবীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই ঘটনাটি সেই কাঠামোগত ব্যর্থতারই একটি বেদনাদায়ক ফলস্বরূপ বিবেচিত হচ্ছে।
তদন্তের অগ্রগতি ও প্রশ্নচিহ্ন
পুলিশ বর্তমানে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এবং সাম্প্রতিক গতিবিধি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার অনুমান করা হচ্ছে, চিকিৎসক মহলে তাঁর এই আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন সৃষ্টি হয়েছে। একজন সক্রিয় আন্দোলনকারী চিকিৎসকের এমন রহস্যজনক মৃত্যু কেবল ব্যক্তিগত পরিসরেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং বৃহত্তর ক্ষেত্রেও এর কারণ অনুসন্ধানের দাবি উঠেছে।
ঘটনার তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা
ডাঃ প্রলয় বসুর মৃত্যু কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি সেই সকল চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে যারা ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হন। তাঁর মৃত্যু সেই আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যেখানে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। এই ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ উন্মোচন করা এবং কোনো প্রকার রহস্য থাকলে তার পর্দা উন্মোচন করা অত্যন্ত জরুরি, যা কেবল পরিবারের জন্যই নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের জন্যও প্রয়োজন। এই ঘটনাটি চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বকেও সামনে নিয়ে এসেছে।
এই ঘটনা কি কেবল ব্যক্তিগত মানসিক অবসাদের ফল, নাকি এর পেছনে রয়েছে আরও গভীর কোনো কারণ, তা জানতে পুলিশের নিবিড় তদন্তের উপরই নির্ভর করছে। যদিওবা তৃনমূল কংগ্রেস পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা কোন ও তদন্তকারী সংস্থা বা প্রশাসনের ওপর ভরসা প্রহসন মাত্র !!!