ব্যুরো নিউজ ২৭ জুন: আজ পবিত্র রথযাত্রা। সনাতন ধর্মের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবটি কেবল জগন্নাথ দেবের রথ টেনে উদযাপন করা হয় না, পশ্চিমবঙ্গে এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা। পুরী, মাহেশ এবং ইসকনের মতো বড় মন্দিরের পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিটি মন্দির ও বনেদি বাড়িতে যখন রথযাত্রা পালিত হচ্ছে, তখনই এর হাত ধরে শুরু হয়ে যায় বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রস্তুতি।
রথযাত্রা ও দুর্গাপূজার শুভ সংযোগ
রথযাত্রা উৎসবের সঙ্গেই বাংলার দুর্গাপূজার এক বিশেষ রীতি জড়িত, যা খুঁটি পুজো নামে পরিচিত। প্রতি বছর রথযাত্রার দিন বা তার কাছাকাছি সময়ে এই খুঁটি পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এটি দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা হিসেবে ধরা হয় এবং পূজার প্যান্ডেল তৈরির জন্য বাঁশ বা কাঠ পোঁতার আগে এই পূজা করা হয়। খুঁটি পুজোর মাধ্যমেই দুর্গাপূজার ঢাকে কাঠি পড়ে, যা এক অর্থে দেবী মূর্তিকে মণ্ডপে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এই পুজো মণ্ডপ এবং দেবী মূর্তিকে অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষা প্রদানেরও কাজ করে। যদি কোনো কারণে রথযাত্রার দিন খুঁটি পুজো করা সম্ভব না হয়, তবে অন্য কোনো শুভ দিন বেছে নেওয়া হয়।
বঙ্গের প্রাচীনতম রথ যাত্রা ; মহেশের রথ ! এক বঙ্গীয় ইতিহাস
খুঁটি পুজোর ইতিহাস ও বিবর্তন
খুঁটি পুজোর ধারণাটি প্রায় শত বছর পুরনো এক ঐতিহ্য থেকে এসেছে। আগে এতো ক্লাব, থিম বা প্রতিযোগিতার চল ছিল না। পূজা মানেই ছিল বনেদি বাড়ির সাবেকি প্রতিমা, যা মূলত ঠাকুর দালানে গড়া হতো। সেই সময় অনেকেই রথযাত্রার শুভ দিনে মাটির প্রতিমার জন্য নির্মিত কাঠের ফ্রেমকে পূজা করতেন, যা কাঠামো পুজো নামেই পরিচিত ছিল। এরপর ধীরে ধীরে দুর্গা প্রতিমা গড়ে উঠত।
একসময় পূজা প্যান্ডেল মানে ছিল কেবল বাঁশ ও রঙিন কাপড়ের তৈরি সাধারণ কাঠামো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বাঁশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে থার্মোকল, চট, প্লাস্টিক, কাঠ, পাট, প্লাস্টার অফ প্যারিস, সিমেন্ট এবং আরও নানা ধরনের আধুনিক সামগ্রী। কলকাতার বড় বড় পূজামণ্ডপগুলির পাশাপাশি, ছোটখাটো প্যান্ডেলগুলিতেও এখন থিমের নতুন চমক দেখা যায়, যা খুঁটি পুজোর দিন থেকেই শুরু হয়ে যায়।
খুঁটি পুজোর ক্রমবর্ধমান জাঁকজমক
যত দিন যাচ্ছে, খুঁটি পুজোর চাকচিক্য ততই বেড়ে চলেছে। আগে যেখানে পূজার প্যান্ডেল উদ্বোধনে তারকা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের দেখা যেত, সেখানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন খুঁটি পুজোর দিন থেকেই বিভিন্ন তাবড় পুজো প্যান্ডেলগুলিতে আমন্ত্রিত তারকাদের আনাগোনা শুরু হয়। এটি পূজার আনুষ্ঠানিক সূচনাকে আরও জাঁকজমকপূর্ণ করে তুলেছে এবং মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে।
রথযাত্রার গৌরবময় ইতিহাস: ভারতীয় সংস্কৃতির চাকা ঘোরে যেখান থেকে
২০২৫ সালের রথযাত্রা ও উল্টো রথের দিনক্ষণ
এবছর রথযাত্রা পড়েছে ২৭শে জুন (১২ আষাঢ়), শুক্রবার। উল্টো রথযাত্রা (পুনর্যাত্রা) অনুষ্ঠিত হবে ৫ই জুলাই (২০ আষাঢ়), শনিবার। ২৬শে জুন দুপুর ২টা ৩৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড থেকে ২৭শে জুন দুপুর ১টা ১৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড পর্যন্ত দ্বিতীয়া তিথি ছিল। এই শুভ দিন থেকেই পশ্চিমবাংলার ঘরে ঘরে এবং পাড়া-মহল্লায় দুর্গাপূজার আগমনী সুর বাজতে শুরু করেছে।