ব্যুরো নিউজ ৩০ মে : কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আজ, শুক্রবার, ভারতের প্রথম দেশীয় বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত পরিদর্শন করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অভাবনীয় সাফল্যের পরই তিনি আইএনএস বিক্রান্তে গেলেন, যেখানে ভারতীয় নৌবাহিনী তার শক্তি ও কৌশলগত সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং বিক্রান্তের ভূমিকা:
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় ভারতীয় নৌবাহিনী তার ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ নিয়ে উত্তর আরব সাগরে অগ্রসর মোতায়েন করেছিল। আইএনএস বিক্রান্ত এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছিল, যার সঙ্গে ছিল ৮ থেকে ১০টি যুদ্ধজাহাজ, যেমন ডেস্ট্রয়ার এবং স্টিল্থ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট। এই মোতায়েন পাকিস্তানকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, যদি তারা উত্তেজনা বাড়ায়, তবে ভারতীয় নৌবাহিনী কেবল তাদের যুদ্ধজাহাজগুলিকেই নয়, স্থল লক্ষ্যবস্তুগুলিও নিশানা করতে পারে। এর ফলস্বরূপ, পাকিস্তানি নৌবাহিনী করাচি নৌঘাঁটি থেকে বের হওয়ার সাহস করেনি এবং যুদ্ধবিরতি দাবি করেছিল।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পরিদর্শনের উদ্দেশ্য:
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী নৌ কর্মকর্তা ও সৈন্যদের উৎসাহ দিতে এবং অভিযানের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করতে আইএনএস বিক্রান্তে গিয়েছেন। এই পরিদর্শন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের পর নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের মনোবল বাড়াবে। রাজনাথ সিং এই সফরের মাধ্যমে নৌবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে একটি বার্তা দেবেন এবং ভারতের প্রতিরক্ষা নীতিকে আরও শক্তিশালী করবেন। এর আগে তিনি শ্রীনগরে সেনা কর্মকর্তাদের এবং ভুজ-এ বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

কেন পাকিস্তান আইএনএস বিক্রান্তকে ভয় পায়?
আইএনএস বিক্রান্তকে পাকিস্তান ভয় পায়, এটি কোনো গোপন বিষয় নয়। পাকিস্তানের নৌবাহিনীর শক্তি সীমিত এবং তাদের ৩০টিরও কম যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। এর বিপরীতে, আইএনএস বিক্রান্ত তার ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ সহ একটি শক্তিশালী যুদ্ধ ইউনিট। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় এর অগ্রসর মোতায়েন পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে করাচি বন্দর ছেড়ে যেতে বাধা দিয়েছে। এই জাহাজটি কেবল সমুদ্রের যুদ্ধজাহাজগুলিকেই নিশানা করতে পারে না, এর যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলি স্থল লক্ষ্যবস্তুতেও সুনির্দিষ্ট হামলা চালাতে সক্ষম।

‘দক্ষিণায় পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই’: সেনাপ্রধানকে জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের স্পষ্ট বার্তা

আইএনএস বিক্রান্ত: এক নজরে
প্রায় ২০,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত, আইএনএস বিক্রান্তকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতীয় নৌবাহিনীর নিজস্ব সংস্থা দ্বারা ডিজাইন করা এই যুদ্ধজাহাজটি বন্দর, নৌপরিবহন ও জলপথ মন্ত্রকের অধীনে একটি সরকারি খাতের শিপইয়ার্ড, কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড দ্বারা নির্মিত হয়েছে। ৪৫,০০০ টনের এই বিমানবাহী রণতরীতে ৭৬ শতাংশ দেশীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে।

বিক্রান্তের বিমান ও অস্ত্রশস্ত্র:
আইএনএস বিক্রান্তের মূল শক্তি তার বিমান বহন ক্ষমতা এবং তাতে সজ্জিত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র। এটি প্রায় ৩০টি বিমান বহন করতে সক্ষম, যার মধ্যে রয়েছে:

  • মিগ-২৯কে (MiG-29K) ফাইটার জেট: এটি বিক্রান্তের প্রধান আক্রমণকারী বিমান। এর উন্নত রাডার, শক্তিশালী অস্ত্র এবং আকাশ থেকে আকাশ ও আকাশ থেকে ভূমিতে হামলার সক্ষমতা এটিকে একটি ভয়ংকর যুদ্ধবিমান করে তোলে।
  • কামভ কা-৩১ (Kamov Ka-31) আর্লি ওয়ার্নিং হেলিকপ্টার: এই হেলিকপ্টারটি দূরপাল্লার রাডার নজরদারি চালিয়ে শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে আগাম সতর্কতা প্রদান করে, যা ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • এমএইচ-৬০আর (MH-60R) মাল্টিরোল হেলিকপ্টার: এটি ডুবোজাহাজ বিরোধী যুদ্ধ (ASW), সার্ফেস ওয়ারফেয়ার (ASuW), অনুসন্ধান ও উদ্ধার (SAR) এবং ইউটিলিটি সহ বিভিন্ন ভূমিকার জন্য সক্ষম।
  • এলসিএ নেভি (LCA Navy): ভবিষ্যতে দেশীয় তেজস (LCA) নৌ সংস্করণও এই বিমানবাহী রণতরী থেকে পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে।

অস্ত্রশস্ত্র: বিক্রান্ত শুধুমাত্র বিমান দ্বারা সুরক্ষিত নয়, এতে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও রয়েছে:

  • বারাক-৮ (Barak-8) সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল (SAM): এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি জাহাজকে শত্রুর বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করে।
  • এ কে-৬৩০ (AK-630) ক্লোজ-ইন ওয়েপন সিস্টেম (CIWS): এটি দ্রুত গতিতে আসা ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তের প্রতিরক্ষা প্রদান করে।
  • অন্যান্য অস্ত্র: জাহাজে মেশিনগান এবং অন্যান্য ছোট ক্যালিবার বন্দুকও রয়েছে।

এই সক্ষমতাগুলির কারণে আইএনএস বিক্রান্ত ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারতের কৌশলগত উপস্থিতি এবং শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর