QRSAM

ব্যুরো নিউজ ১০ জুন : ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করতে ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশীয় কুইক রিঅ্যাকশন সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল (QRSAM) সিস্টেমের সম্ভাব্য অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৩০,০০০ কোটি টাকার এক বিশাল উন্নতি সাধনের পথে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শীঘ্রই এই প্রস্তাব অনুমোদন করতে চলেছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রেক্ষাপটে সামরিক প্রস্তুতি
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সফলতার প্রেক্ষাপটে এই বড় ধরনের সংযোজন ঘটানো হচ্ছে, যেখানে ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে পাকিস্তানি বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনসহ একাধিক আকাশ পথে আসা হুমকিকে প্রতিহত ও নিষ্ক্রিয় করেছে। পশ্চিমা এবং উত্তরাঞ্চলের সীমান্ত বরাবর ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে, তিনটি QRSAM রেজিমেন্টের এই অধিগ্রহণ স্বল্প-পাল্লার আকাশ আক্রমণের মোকাবিলায় ভারতের দ্রুততা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধি করবে। অপারেশন সিঁদুরে QRSAM অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।

কুইক রিঅ্যাকশন সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল (QRSAM) সম্পর্কে জানুন
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) দ্বারা তৈরি QRSAM হলো একটি অত্যাধুনিক, অত্যন্ত মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি চলাচলের সময় বা স্বল্প বিরতির সময়ও লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত, ট্র্যাক এবং ধ্বংস করার উন্নত ক্ষমতা রাখে—যা এটিকে গতিশীল এবং প্রতিকূল যুদ্ধক্ষেত্রের পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত করে তোলে। এর পাল্লা প্রায় ৩০ কিমি।

QRSAM: Akash এবং MRSAM সিস্টেমের পরিপূরক
প্রায় ৩০ কিমি পাল্লার এই সিস্টেমটি বাহিনীর বিদ্যমান MRSAM এবং Akash সিস্টেমের স্বল্প থেকে মাঝারি পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে পরিপূরক করবে। পরীক্ষা চলাকালীন দিন ও রাতের উভয় অপারেশনাল পরিস্থিতিতে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণ পরিষদের বৈঠক জুনের চতুর্থ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। QRSAM, Akash প্রকল্পের অংশ হিসাবে তৈরি, আকাশ এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করে।

QRSAM এবং ভারতের সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা গ্রিড (Integrated Air Defense Grid)
QRSAM, ভারতের ইন্টিগ্রেটেড এয়ার ডিফেন্স গ্রিডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিভিন্ন স্তর থেকে আসা আকাশ পথে হুমকি মোকাবেলা করে। এই গ্রিডে S-400, Barak-8, Akash এবং অন্যান্য দেশীয় ও আমদানি করা সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। QRSAM স্বল্প পাল্লার বিপদ যেমন ড্রোন এবং কম উচ্চতার উড়োজাহাজ ধ্বংস করতে অত্যন্ত উপযোগী। এই গ্রিড ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) এর ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (IACCS) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা রাডার এবং সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য একত্রিত করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

Barak 08-এর সাথে QRSAM-এর ক্ষমতার তুলনা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় QRSAM একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে চলেছে। এর কিছু বৈশিষ্ট্য এটিকে দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল হুমকির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর করে তোলে, বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং বিমানবাহিত যুদ্ধবিমানের ‘আন্ডার দ্য বেলি’ (নিম্ন উচ্চতার) হুমকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে।

  • QRSAM: দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং গতিশীলতা QRSAM-এর মূল শক্তি হলো এর দ্রুত প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা এবং উচ্চ গতিশীলতা। এই সিস্টেমটি “অন দ্য মুভ” অর্থাৎ চলন্ত অবস্থাতেও লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ট্র্যাক করতে পারে এবং অল্প সময়ের বিরতিতে নিক্ষেপ করতে পারে। এটি ট্যাঙ্ক এবং পদাতিক যুদ্ধ যানের সাথে সহজেই চলাচল করতে পারে, যা রণক্ষেত্রে তাদের জন্য তাৎক্ষণিক আকাশ প্রতিরক্ষা সরবরাহ করে। এর ৩০ কিমি পাল্লা স্বল্প পাল্লার, দ্রুতগতি সম্পন্ন হুমকি যেমন ড্রোন, হেলিকপ্টার, এবং নিচু দিয়ে উড়ে আসা যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর। এটি তাৎক্ষণিক হুমকির বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে, যা বিশেষত “আন্ডার দ্য বেলি” আক্রমণ অর্থাৎ খুব নিচু উচ্চতায় আক্রমণকারী ক্ষেপণাস্ত্র বা জঙ্গিবিমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে প্রতিহত করার সময় খুব কম থাকে।

  • Barak 08: দীর্ঘ পাল্লা ও বহুমুখী সক্ষমতা অন্যদিকে, Barak 08 (MRSAM/LR-SAM) একটি যৌথ ভারতীয়-ইসরায়েলি উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যার পাল্লা ৭০ থেকে ১০০ কিমি (এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ সংস্করণে ১৫০ কিমি পর্যন্ত)। এটি QRSAM-এর চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম এবং বিমান, হেলিকপ্টার, জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ইউএভি, এমনকি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সহ বিভিন্ন ধরনের আকাশপথে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর। Barak 08-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর ৩৬০-ডিগ্রি কভারেজ এবং একই সাথে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা। এটি S-400 এবং Akash-এর মতো অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে একটি বহুমুখী প্রতিরক্ষা স্তর তৈরি করে। এটি মূলত মাঝারি থেকে দীর্ঘ পাল্লার হুমকির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা ও ভূমিকা
চার দিনের পাকিস্তান সংঘাতের সময়, যা চীনা অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছিল, ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলি L-70 এবং Zu-23 এয়ার ডিফেন্স বন্দুক ব্যবহার করে বেশিরভাগ ড্রোন ধ্বংস করেছিল, যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর Spydwr এবং S-400 আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে Akash এবং MRSAM গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সেনাবাহিনী নতুন রাডার, অত্যন্ত স্বল্প পাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, জ্যামার এবং লেজার-ভিত্তিক সিস্টেম পাচ্ছে যাতে তুর্কি এবং চীনা উৎপত্তির ড্রোনগুলির মোকাবিলা করা যায়। QRSAM-এর সংযোজন ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন পূরণ করবে, যা স্বল্প পাল্লার এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল হুমকির জন্য একটি ডেডিকেটেড সমাধান সরবরাহ করবে। এটি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সামগ্রিক প্রতিরক্ষা পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

এই প্রতিবেদনটিতে QRSAM-এর কর্মক্ষমতা, বৈশিষ্ট্য এবং ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় এর ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। যদি আপনার অন্য কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর