ব্যুরো নিউজ ২৬ মে : রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে একটি স্পর্শকাতর সীমান্ত পরিদর্শনের সময় এক নাটকীয় ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জানা গেছে, একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন তার হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে গভীর রাতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। তবে রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ড্রোনটিকে প্রেসিডেন্টের উড়ান পথের কাছে পৌঁছনোর আগেই অবরোধ করে ধ্বংস করে দেয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কুর্স্ক সফরকালে হামলার ঘটনা
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে পুতিনের কুর্স্ক সফরকালে। গত এপ্রিল মাসে মস্কো ঘোষণা করে যে তারা এই অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে, এরপর এটিই ছিল পুতিনের প্রথম কুর্স্ক সফর। রুশ গণমাধ্যমগুলি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলেছে, এই হামলা ছিল আকাশপথে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী কনভয়কে আঘাত করার একটি “সমন্বিত এবং ইচ্ছাকৃত” প্রচেষ্টা। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানান, “প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের উড়ান পথের কাছে একটি ড্রোন শনাক্ত করা হয়। এটি কোনো হুমকি তৈরি করার আগেই আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।”
হামলায় কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি এবং পুতিনের সফরসূচিতে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি তদন্ত করছে যে, কীভাবে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন কুর্স্কের আকাশসীমা ভেদ করল এবং এই হামলাটি হত্যাচেষ্টা ছিল নাকি কিয়েভের একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশলের অংশ ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত: কুর্স্ক অঞ্চলের গুরুত্ব
প্রতিবেদিত ড্রোন হামলা নিয়ে ইউক্রেন সরকার বা সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি। তবে, ইউক্রেন অতীতে রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থানগুলিতে হামলা চালিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের একটি আকস্মিক অনুপ্রবেশের পর থেকেই এই অঞ্চলটি একটি সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে – এটিকে চলমান যুদ্ধের সময় মস্কোর জন্য একটি বড় প্রতীকী আঘাত হিসাবে দেখা হয়েছিল। রাশিয়া যদিও দাবি করেছিল যে, ২৬ এপ্রিল কুর্স্কের উপর তারা পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে, তবে কিয়েভ এই দাবি অস্বীকার করেছে। পুতিনের সাম্প্রতিক সফরটিকে সেই অপারেশনের পর শক্তি প্রদর্শনের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছিল।
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ও উত্তর কোরিয়ার ভূমিকা
বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। ক্রেমলিন সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ পশ্চিমকে যুদ্ধবিরতি আলোচনার সুযোগ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত করার অভিযোগ এনেছেন। এদিকে, কিয়েভ এবং তার মিত্ররা দাবি করেছে যে, উত্তর কোরিয়া কুর্স্ক পুনর্দখলে রাশিয়াকে সাহায্য করার জন্য প্রায় ১২,০০০ সৈন্য পাঠিয়েছে – যদিও মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে এই দাবি নিশ্চিত করেনি। সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনা আবারও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের তীব্রতা এবং এর আন্তর্জাতিক প্রভাবের ওপর আলোকপাত করল।
