ব্যুরো নিউজ ২৬শে আগস্ট ২০২৫ : এনআরআই কোটায় ভুয়া নথি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির একটি বিশাল চক্রের সন্ধান পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) এবং বিদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসগুলোর সহায়তায় পরিচালিত এই তদন্তে প্রায় ১৮,০০০ এমবিবিএস আসনে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
জালিয়াতির পদ্ধতি ও চক্রের কার্যকলাপ
ইডি-র তদন্তে জানা গেছে, দালাল চক্র বেসরকারি কলেজগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া দূতাবাস-প্রদত্ত এনআরআই সার্টিফিকেট এবং জাল পারিবারিক সম্পর্ক সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করত। অবাক করার মতো বিষয় হলো, একই সেট জাল নথি বারবার একাধিক শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। কিছু প্রকৃত এনআরআই প্রার্থীও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল, যারা অর্থের বিনিময়ে তাদের পরিচয় ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে।
- বিশাল অঙ্কের অর্থ: এনআরআই কোটায় ভর্তির জন্য একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে গড়ে ১.৬০ কোটি টাকার বেশি নেওয়া হতো।
- নিয়ম লঙ্ঘন: ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী, এনআরআই কোটায় শিক্ষার্থীদের ফি কোনো এনআরআই আত্মীয়কে পরিশোধ করতে হয়, কিন্তু ইডি-র তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে এই ফি দেওয়া হয়েছে।
- ভুয়া স্ট্যাম্প: বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত কর্মকর্তাদের নামে তৈরি করা অসংখ্য জাল এনআরআই সার্টিফিকেট ও নোটারাইজড স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছে।
রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন
ইডি-র পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গর প্রশাসনকে এই জালিয়াতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমাণ দেওয়া হলেও, তারা নির্দিষ্ট কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ইডি সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই কলেজগুলোকে জালিয়াতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি এন এস নিগম অবশ্য এ বিষয়ে বলেছেন, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই নেওয়া হবে,” তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো কলেজের নাম জানাতে পারেননি।
বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি ও চলমান তদন্ত
এই বিশাল কেলেঙ্কারির তদন্তে ইডি ইতোমধ্যে জড়িত কলেজ ও ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১২.৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গের একটি বেসরকারি কলেজের ৬.৪২ কোটি টাকার একটি ফিক্সড ডিপোজিটও সাময়িকভাবে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইডি-র এই কড়া পদক্ষেপ এনআরআই কোটার ব্যাপক অপব্যবহারের বিষয়টি সামনে এনেছে, যা মেডিকেল ভর্তির স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এই দুর্নীতি শুধু দেশের চিকিৎসা শিক্ষার সততাই নষ্ট করছে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যর্থ করে দিচ্ছে।