ব্যুরো নিউজ ৩০ মে : বিহারের কারাকাটে এক বিশাল জনসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ (শুক্রবার) লোকসভা নির্বাচনের রণদামামা বাজিয়ে দিলেন। তাঁর ভাষণে কংগ্রেস ও আরজেডি-কে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বিহারের উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ দমনের দৃঢ় সংকল্প এবং মাওবাদ নির্মূলের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারে বিজেপির সাংগঠনিক ভিত মজবুত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।


কংগ্রেস-আরজেডি’র বিরুদ্ধে ‘জঙ্গলরাজ’ ও দুর্নীতির অভিযোগ

জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী সরাসরি কংগ্রেস ও আরজেডি-কে নিশানা করে বলেন, যারা বিহারের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এবং যাদের শাসনামলে বঞ্চিত মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, তারাই আজ ক্ষমতা দখলের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচারের মিথ্যা কথা বলছে। রেলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি পূর্বতন সরকারের দুর্নীতির কড়া সমালোচনা করেন:

  • “বিহারের রেলের অবস্থাও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই উন্নয়ন কাজগুলো আগেও করা যেত। কিন্তু যারা বিহারে রেলকে আধুনিকীকরণের দায়িত্বে ছিল, তারা গরিবের জমি লুট করেছে। গরিবদের লুট করা এবং তাদের অসহায়তার সুযোগ নেওয়া ছিল তাদের সামাজিক পরিবর্তনের পদ্ধতি। বিহারের মানুষের জন্য ভবিষ্যতে ‘জঙ্গলরাজ’-এর মিথ্যা এবং প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।”

প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে, নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে ‘জঙ্গলরাজ’ সরকার বিদায় নেওয়ার পর বিহার কীভাবে প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন:

‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ থামেনি, বরং আরও তীব্র হয়েছে:

  • “যদি সন্ত্রাসবাদ আবার মাথা চাড়া দেয়, তাহলে ভারত তাদের খুঁজে বের করে গুঁড়িয়ে দেবে। আমাদের লড়াই দেশের প্রতিটি শত্রুর বিরুদ্ধে, সে সীমান্তের ওপারেই থাকুক বা দেশের ভিতরে।”

প্রধানমন্ত্রী সাছারামের জনগণকে ভগবান রামের ‘প্রাণ যায় পর বচন না যায়’ প্রথার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। পহেলগামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বিহারের মাটি থেকে করা তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন:

  • “পহেলগামের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর, আমি বিহারের মাটি থেকে দেশকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, সন্ত্রাসবাদের মূল হোতাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, তারা এমন শাস্তি পাবে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। আজ, আমি যখন বিহারে এসেছি, তখন আমি আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেই এখানে এসেছি।”

গত ২২শে এপ্রিল পহেলগাম হামলার দু’দিন পর, ২৪শে এপ্রিল বিহারের মধুবনীতে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে, ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসবাদীকে চিহ্নিত করবে এবং শাস্তি দেবে। তিনি ইংরেজিতে বিরল ভঙ্গিতে বলেছিলেন যে, পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের কল্পনারও অতীত শাস্তি পাবে।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক শক্তির কথা তুলে ধরে মোদী বলেন:

  • “পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, যার সুরক্ষায় সন্ত্রাসবাদীরা তাদের বাঙ্কারে নিরাপদ বোধ করত, আমাদের বাহিনী এক আঘাতেই তাদের নতজানু করে দিয়েছে। পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটি এবং তাদের সন্ত্রাসী লঞ্চপ্যাডগুলি মিনিটের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটাই নতুন ভারত। এটাই নতুন ভারতের শক্তি।”

তিনি ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সময় বিএসএফের নজিরবিহীন বীরত্ব ও সাহসের প্রশংসা করেন এবং ১০ই মে মাতৃভূমির পবিত্র কর্তব্য পালন করতে গিয়ে সীমান্তে জীবন উৎসর্গকারী বিএসএফ সাব-ইন্সপেক্টর ইমতিয়াজের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মোদী দৃঢ়ভাবে বলেন:

নকশালবাদ নির্মূল ও বিহারের সার্বিক উন্নয়ন

প্রধানমন্ত্রী নকশালবাদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের লড়াইয়েরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে কীভাবে সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের নির্মূল করা হয়েছে এবং কিভাবে কয়েক বছর আগে সাছারাম ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে নকশালবাদ প্রবল ছিল:

  • “বিহারের মানুষ সাক্ষী কীভাবে আমরা গত বছরগুলোতে সহিংসতা ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের নির্মূল করেছি। কয়েক বছর আগে সাছারাম ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে নকশালবাদ কতটা প্রবল ছিল। এই মানুষগুলোর বাবা সাহেব আম্বেদকারের প্রতি কোনো বিশ্বাস ছিল না। এমন পরিস্থিতিতেও নীতিশ কুমার এখানে উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।”

তিনি জানান যে, ২০১৪ সালের আগে ৭৫টিরও বেশি জেলা নকশাল-আক্রান্ত ছিল, যা এখন কমে মাত্র ১৮টি জেলায় দাঁড়িয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, খুব শীঘ্রই নকশালবাদী সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে।

বিহারের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ‘ডাবল ইঞ্জিন সরকারে’র অবিরাম প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, তিনি কারাকাট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।

  • “আজ, বিহারের উন্নয়নে নতুন গতি দিতে আমি এই পবিত্র ভূমিতে আসার সৌভাগ্য লাভ করেছি। এখানে ৫০,০০০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। আপনারা সকলে আমাকে আশীর্বাদ করতে এত বড় সংখ্যায় এসেছেন। আমি আপনাদের স্নেহ এবং বিহারের ভালোবাসা সর্বদা আমার হৃদয়ের গভীরে রাখব।”

পরিবহন, শক্তি এবং যোগাযোগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিহারের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং কল্যাণমূলক উদ্যোগের সূচনা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
 প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার একটি মূল মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষত চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে। রাজ্যে মূল লড়াই ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং মহাগঠবন্ধন-এর মধ্যে। তবে, একটি প্রাক-নির্বাচনী জনমত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে প্রশান্ত কিশোরও কিছু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর