ব্যুরো নিউজ ০৩ অক্টোবর ২০২৫ : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বুধবার নয়াদিল্লির ডঃ আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন। এই উপলক্ষে তিনি আরএসএস-এর জাতীয় সেবায় অবদানকে উৎসর্গ করে একটি বিশেষ ১০০ টাকার স্মারক মুদ্রা এবং একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেন।
১০০ টাকার মুদ্রা ও স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এই বিশেষ ১০০ টাকার মুদ্রায় প্রথমবারের মতো স্বাধীন ভারতে ‘বরদ মুদ্রা’-য় সিংহ-আসনস্থ ভারত মাতার একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যার সামনে স্বয়ংসেবকরা নতমস্তকে প্রণাম করছেন।
তিনি আরও জানান যে, প্রকাশিত ডাকটিকিটটিতে ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণকারী আরএসএস স্বয়ংসেবকদের চিত্র রয়েছে, যা জাতীয় সেবায় এই সংগঠনের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “আজ প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিটটি হলো একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি, যা ১৯৬৩ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে আরএসএস স্বয়ংসেবকদের গর্বিত পদযাত্রাকে স্মরণ করে।”
বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা
এরপর তিনি দেশবাসীকে বিজয়া দশমীর আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বিজয়া দশমী হলো এই শাশ্বত সত্যের প্রতীক যে, সৎ ও পূণ্য সর্বদা মন্দ ও প্রতারণার উপর জয়লাভ করে। তিনি উৎসবের মাধ্যমে দেশজুড়ে মানুষকে সাহস, প্রজ্ঞা এবং ভক্তিকে জীবনে পথপ্রদর্শক শক্তি হিসেবে গ্রহণ করার প্রেরণা পাওয়ার কামনা করেন।
বিজয় ও মূল্যবোধের বার্তা
প্রধানমন্ত্রী মোদী বিজয়া দশমীর তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, “আগামীকাল বিজয়াদশমী, একটি উৎসব যা অশুভের উপর শুভর বিজয়, অন্যায়ের উপর ন্যায়ের জয়, মিথ্যার উপর সত্যের জয় এবং অন্ধকারের উপর আলোর জয়কে প্রতীকায়িত করে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই পবিত্র উপলক্ষ্যটি সত্য ও ধার্মিকতার পথে অবিচল থাকতে সবাইকে উৎসাহিত করবে। তাঁর মতে, দশেরা কেবল রাবণের উপর ভগবান রামের বিজয় উদযাপন নয়, বরং নেতিবাচকতাকে জয় করে ন্যায় ও ধর্মকে সমুন্নত রাখার জন্য ভেতরের শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করারও বিষয়।
ঐক্যের আহ্বান ও জনবিন্যাসের চ্যালেঞ্জ
ডঃ আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতের ঐক্য এবং সামাজিক সম্প্রীতির ওপর আসা হুমকি সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সব সময় ভারতের আত্মা। এই শক্তি যদি ভেঙে যায়, তবে ভারত দুর্বল হয়ে পড়বে… সামাজিক সম্প্রীতি অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে এক বিরাট হুমকির সম্মুখীন, যা জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এই প্রশ্নটি আমাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। এই কারণেই আমি লালকেল্লা থেকে ‘জনবিন্যাস মিশন’ ঘোষণা করেছিলাম। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে।”
আরএসএস প্রতিষ্ঠা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠা এবং বিজয়া দশমীর প্রতীকবাদের মধ্যে যোগসূত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “১০০ বছর আগে এই মহান দিনে আরএসএস-এর মতো একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা কোনো কাকতালীয় ঘটনা ছিল না।”
আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতীয় সেবার দূরদর্শিতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “এটি আমাদের প্রজন্মের স্বয়মসেবকদের সৌভাগ্য যে আমরা সংঘের শতবর্ষের মতো একটি মহৎ ঘটনার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এই উপলক্ষে, আমি আজ লক্ষ লক্ষ জাতীয় সেবায় নিবেদিতপ্রাণ স্বয়মসেবকদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং তাদের অভিনন্দন জানাই। আমি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের পূজনীয় আদর্শ, শ্রদ্ধেয় ডঃ হেডগেওয়ার জীর চরণে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে সংঘের বিভিন্ন শাখা সমাজের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে কাজ করলেও তাদের মধ্যে কখনও কোনো বিরোধিতা থাকে না, কারণ তারা ‘রাষ্ট্র প্রথম’ (Nation First) নীতিতে কাজ করে। এর আগে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর মাসিক বেতার অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’-এ আরএসএস-এর শতবর্ষের যাত্রাকে “অবিশ্বাস্য, নজিরবিহীন এবং অনুপ্রেরণামূলক” বলে বর্ণনা করেন।