ব্যুরো নিউজ ৬ আগস্ট ২০২৫ : দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী আচরণের প্রেক্ষিতে ভারত ও ফিলিপিন্স নিজেদের সম্পর্ককে কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে। মঙ্গলবার দুই দেশের মধ্যে ১০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে ফৌজদারি বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তা এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের হস্তান্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সফররত ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ আর মারকোস জুনিয়রের মধ্যে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিরক্ষা ও সামুদ্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “ভারত ও ফিলিপিন্স নিজেদের পছন্দ অনুসারে বন্ধু, এবং নিয়তির দ্বারা অংশীদার। ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত আমরা একই মূল্যবোধে ঐক্যবদ্ধ।” তিনি উল্লেখ করেন যে ফিলিপিন্স ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ এবং ‘মহাসাগর’ ভিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। উভয় দেশই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং নিয়ম-ভিত্তিক শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রেসিডেন্ট মারকোস জুনিয়র বলেন, “আমরা প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছি। আমাদের সামরিক বাহিনীর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান এবং প্রশিক্ষণের জন্য নতুন ব্যবস্থা তৈরি করতে সম্মত হয়েছি। আমাদের ব্রাহমোস প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলো এই অঙ্গীকারের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।”
President Marcos Philippines : ভারত-ফিলিপাইন: দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে মোদি ও মারকোসের আসন্ন বৈঠক
একাধিক চুক্তি ও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর
এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ফৌজদারি বিষয়ে পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি।
- সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি।
- ভারত-ফিলিপিন্স অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার শর্তাবলী।
- সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর মধ্যে পরিষেবা কর্মীদের আলোচনার জন্য শর্তাবলী।
- উপকূলরক্ষীদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
ভিসা নীতি এবং সরাসরি বিমান চলাচল
প্রধানমন্ত্রী মোদী ফিলিপিন্স সরকারের প্রতি এপ্রিল ২২ তারিখের পাহালগাম হামলার তীব্র নিন্দা করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ফিলিপিন্স সরকারের ভারতীয় পর্যটকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। জবাবে ভারতও ফিলিপিন্সের পর্যটকদের জন্য বিনামূল্যে ই-ভিসা সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি বছরে দিল্লি এবং ম্যানিলার মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার জন্যও কাজ করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
ইন্দো-প্যাসিফিকে নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক সচেতনতা বাড়াতে দুই দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে জাহাজ নির্মাণ, উপকূলীয় নজরদারি, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলা (HADR), এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার (SAR) কার্যক্রমের মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা। উভয় দেশই যৌথ সমুদ্র গবেষণা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জলবিদ্যা (hydrography) ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে।
এছাড়াও, দুই দেশ প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বাড়াতে যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সহ-উন্নয়ন ও সহ-উৎপাদনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তথ্য আদান-প্রদান ও ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে।