ব্যুরো নিউজ ৩১ অক্টোবর ২০২৫ : সর্দার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী, ৩১ অক্টোবর, প্রতি বছর ভারতে রাষ্ট্রীয় একতা দিবস (National Unity Day) হিসেবে পালিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক (MHA) অনুসারে, এই দিবসটি “দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং সুরক্ষার প্রতি প্রকৃত ও সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের জাতির অন্তর্নিহিত শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতাকে পুনরায় নিশ্চিত করার সুযোগ” দেয়। সার্ধশত জন্মবার্ষিকী (১৫০তম) উদযাপনের প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেভাডিয়ায় পৌঁছান। সেখানে তিনি স্থানীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে একাধিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের লৌহমানবকে শ্রদ্ধা জানান।
প্যাটেল ও তাঁর গুরুত্ব:
১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাটের নাদিয়াদে জন্মগ্রহণকারী সর্দার প্যাটেল ছিলেন ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পর, তিনি ৫৬২টি দেশীয় রাজ্যকে ভারতের ইউনিয়নভুক্ত করার বিশাল দায়িত্ব পান।
স্বাধীনতার সময় এই রাজ্যগুলিকে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছিল: হয় ভারত বা পাকিস্তানে যুক্ত হওয়া, অথবা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে থাকা। অনেক রাজ্যই স্বাধীনতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু প্যাটেল, ভাপ্পালা পানগুন্নি মেনন-এর সহায়তায়, এই রাজ্যগুলিকে ভারতে একীভূত করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং বিভিন্ন উপায়ে এই কাজটি সম্পন্ন করেন।
- প্রিভি পার্স: দেশীয় রাজাদের ভারতে একীভূত করতে রাজি করানোর জন্য প্যাটেল ‘প্রিভি পার্স’ ধারণাটি চালু করেছিলেন, যেখানে বিনিময়ে রাজারা ভারত সরকার থেকে বার্ষিক অর্থ পেতেন। (যদিও এটি ১৯৭০ সালে ইন্দিরা গান্ধী সরকার কর্তৃক বিলুপ্ত হয়।)
প্যাটেলের বড় তিন মীমাংসা : জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর
প্যাটেলের প্রচেষ্টায় বেশিরভাগ দেশীয় রাজ্য ভারতে যুক্ত হলেও, জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ এবং কাশ্মীর সমস্যা সৃষ্টি করেছিল।
১. যোধপুর: মহারাজা হনবন্ত সিং পাকিস্তান যোগের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু প্যাটেল তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন এবং হিন্দু-অধ্যুষিত রাজ্যটির ভারতের সাথে যুক্ত হওয়ার গুরুত্ব বোঝান। ফলে যোধপুর ভারতে যুক্ত হয়।
২. জুনাগড়: জুনাগড়ের জনগণ হিন্দু-অধ্যুষিত হলেও শাসক ছিলেন একজন মুসলিম নবাব। নবাব পাকিস্তান যোগ দিলে জনগণের বিদ্রোহের মুখে তিনি করাচিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জুনাগড় ভারতে যুক্ত হয়।
৩. কাশ্মীর: পাকিস্তান কাশ্মীর আক্রমণ করলে মহারাজা হরি সিং ভারতের সাহায্য চান। মেনন কাশ্মীরে গিয়ে মহারাজাকে ভারতে যোগদানের বিকল্প দেন। তীব্র চাপের মুখে মহারাজা রাজ্যটিকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
৪. হায়দ্রাবাদ: হায়দ্রাবাদ ভারতে যোগ দিতে অস্বীকার করে এবং সেখানে শাসন ব্যবস্থা হিন্দুদের উপর সহিংসতা চালাচ্ছিল। ফলে প্যাটেলের নির্দেশে ১৯৪৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ‘অপারেশন পোলো’ শুরু হয় এবং ভারতীয় বাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে। চার দিন পর নিজাম আত্মসমর্পণ করেন এবং হায়দ্রাবাদ ভারতের অংশ হয়।
পরিবেশবান্ধব পরিবহণ: ই-বাসের সূচনা
কেভাডিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’-তে আসা দর্শনার্থীদের জন্য আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব পরিবহণ নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী বৈদ্যুতিক বাসের একটি বহরের সূচনা করেন। এই উদ্যোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এই ইলেকট্রিক বাসগুলো কেভাডিয়া পরিদর্শনে আসা মানুষের জন্য পরিবেশ-বান্ধব ও কার্যকর ভ্রমণ নিশ্চিত করবে, যা আমাদের স্থিতিশীল উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ
সর্দার প্যাটেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক মুদ্রা ও ডাকটিকিট প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রতি তাঁর বিশাল অবদানকে স্মরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী মন্তব্য করেন, “এই ঐতিহাসিক উপলক্ষে আমরা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের তুলনাহীন উত্তরাধিকারকে স্মরণ ও স্যালুট জানাই, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।”
১২১৯ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প
কেভাডিয়ার সার্বিক বৃদ্ধিকে আরও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী মোদী মোট ১২১৯ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আদিবাসী নেতা ভগবান বীরসা মুণ্ডার প্রতি উৎসর্গীকৃত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বীরসা মুণ্ডা ভবন-এর উদ্বোধন।
- গুজরাট স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন (GSEC) এবং সর্দার সরোবর নর্মদা নিগম লিমিটেড (SSNNL)-এর কর্মীদের জন্য নতুন আবাসিক কমপ্লেক্স।
- পর্যটন পরিকাঠামো উন্নত করার লক্ষ্যে একটি আতিথেয়তা জেলার (Hospitality District) প্রথম পর্যায়।
- কেভাডিয়ার প্রাকৃতিক আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য একটি বনসাই উদ্যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই মূল প্রকল্পগুলো কেবল বাসিন্দা ও কর্মীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে না, বরং বিশ্বমানের গন্তব্য হিসেবে কেভাডিয়ার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। আমরা সর্দার প্যাটেলের মতো মহান নেতাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি আধুনিক, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভারত গড়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ভারতের ঐক্যের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সর্দার প্যাটেলকে “ভারতের লৌহমানব” (Iron Man of India) বলা হয়।
 
				
 
								 
								 
								
















