ব্যুরো নিউজ ৩১ অক্টোবর ২০২৫ : সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ পালিত হলো দেশজুড়ে। গুজরাটের কেভাডিয়ায় ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’র পাদদেশে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানান, তেমনই কাশ্মীর, অনুপ্রবেশ এবং ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান।
শ্রদ্ধা নিবেদন ও ‘একতা দিবস সমারোহ’
সকাল ৮টা নাগাদ প্রধানমন্ত্রী ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’তে পৌঁছান। সেখানে তিনি সর্দার প্যাটেলের মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং প্রার্থনা করেন। এরপর ‘একতা দিবস সমারোহ’ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরা হয়।
প্রধানমন্ত্রী এক্স (পূর্বের টুইটার)-এ পোস্ট করে সর্দার প্যাটেলকে ভারতের একীকরণের চালিকা শক্তি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি লেখেন: “তাঁর জাতীয় অখণ্ডতা, সুশাসন এবং জনসেবার প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। আমরা একতা, শক্তি এবং আত্মনির্ভর ভারতের তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে সমুন্নত রাখতে আমাদের সম্মিলিত সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করছি।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ‘একতা কুচকাওয়াজ’ (Ekta Parade)-এর উদ্বোধন করেন এবং দেশবাসীকে জাতীয় ঐক্যের শপথ পাঠ করান। এই কুচকাওয়াজে পুলিশ, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (CAPF), এনসিসি এবং অশ্বারোহী, উষ্ট্রারোহী ও ডগ স্কোয়াডের ইউনিট অংশ নেয়, যার নেতৃত্ব দেয় সম্পূর্ণভাবে মহিলা অফিসারদের দল।
কাশ্মীর ইস্যুতে নেহেরু ও কংগ্রেসকে নিশানা
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বড় অংশ জুড়েই ছিল কাশ্মীর সমস্যা এবং তা নিয়ে কংগ্রেসের ভূমিকা। তিনি বলেন, সর্দার প্যাটেল ৫৫০টিরও বেশি দেশীয় রাজ্যকে ভারতে একীভূত করার “অসম্ভব কাজ” সম্পন্ন করেছিলেন। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সিদ্ধান্তের জন্য দেশকে ভুগতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর অভিযোগ:
- সর্দার প্যাটেল চেয়েছিলেন সম্পূর্ণ কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করতে, কিন্তু নেহেরু তাতে বাধা দেন।
- “কাশ্মীরকে একটি পৃথক সংবিধান এবং পৃথক পতাকা দিয়ে ভাগ করা হয়েছিল। কংগ্রেসের ভুলের আগুনে কাশ্মীর কয়েক দশক ধরে জ্বলেছে।“
- কংগ্রেসের দুর্বল নীতির কারণেই কাশ্মীরের একটি অংশ বেআইনিভাবে পাকিস্তানের দখলে চলে যায় এবং পাকিস্তান সেখানে সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়।
- তাঁর সরকারের প্রশংসা করে মোদী বলেন, বিজেপি সরকার ৩৭০ ধারার শৃঙ্খল ভেঙেছে এবং আজ কাশ্মীর মূল স্রোতে যুক্ত হয়েছে।
‘ঘরে ঢুকে মারে ভারত’: সন্ত্রাসবাদ ও অনুপ্রবেশ
প্রধানমন্ত্রী এই মঞ্চ থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেন।
- সন্ত্রাসের জবাব: তিনি বলেন, তাঁর সরকার সর্দার প্যাটেলের দৃঢ় নীতি অনুসরণ করে। ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর সময় বিশ্ব দেখেছে যে যদি কেউ ভারতের দিকে চোখ তুলে তাকায়, তবে “ভারত ঘরে ঢুকে মারে।”
- অনুপ্রবেশকারী: মোদী অনুপ্রবেশকারীদের দেশের ঐক্য ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে চিহ্নিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলি ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য অনুপ্রবেশের সমস্যা উপেক্ষা করেছে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন, তাঁর সরকার ভারত থেকে প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে বিতাড়িত করবে এবং নকশালবাদকে দেশ থেকে শেষ করবে।
‘বন্দে মাতরম’ বিকৃতির অভিযোগে আক্রমণ
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ‘দাসত্বের মানসিকতা’ লালন করার অভিযোগ এনে মোদী ‘বন্দে মাতরম’ ইস্যুতেও আক্রমণ শানান।
- প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর কিছুদিন পরেই ‘বন্দে মাতরম’-এর ১৫০তম বার্ষিকী পালিত হবে। ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা যখন বঙ্গভঙ্গ করেছিল, তখন ‘বন্দে মাতরম’ ছিল ঐক্যের ধ্বনি।
- মোদীর দাবি, ব্রিটিশরা যা করতে ব্যর্থ হয়েছিল, কংগ্রেস তা সফল করেছে। কংগ্রেস ধর্মীয় কারণে ‘বন্দে মাতরম’-এর কিছু অংশ বাদ দিয়েছিল। তিনি বলেন, “যেদিন কংগ্রেস ‘বন্দে মাতরম’-কে ভাঙা, কাটা ও ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিনই ভারতের বিভাজনের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল। কংগ্রেস সেই পাপ না করলে, আজ ভারতের চিত্র অন্যরকম হতে পারত।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, আজকের দিনে কোটি কোটি মানুষ ঐক্যের শপথ নিয়েছেন। জাতির ঐক্য দুর্বল করতে পারে এমন যেকোনো চিন্তাভাবনা ও কাজকে বর্জন করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
 
				
 
								 
								 
								
















