ব্যুরো নিউজ ০৩ অক্টোবর ২০২৫ : গতকাল ২ অক্টোবর, দেশজুড়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হচ্ছে মহাত্মা গান্ধী এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মবার্ষিকী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুই মহান নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাট ও বিজয়ঘাটে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুই নেতার আদর্শ ভারতকে এক নতুন পরিচিতি দিয়েছে এবং দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোয় এক গভীর ছাপ ফেলেছে।
গান্ধী জয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধার্ঘ্য
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এদিন মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকীতে রাজঘাটে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার আদর্শ মানব ইতিহাসের গতিপথকে পরিবর্তিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘এক্স’ (সাবেক সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলেন, “গান্ধীজি দেখিয়েছিলেন যে সাহস এবং সরলতা কীভাবে বড় পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে। তিনি মানুষের ক্ষমতায়নের অপরিহার্য উপায় হিসাবে সেবা এবং সহানুভূতির শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে আমরা তাঁর পথ অনুসরণ করে চলব।”
মহাত্মা গান্ধী ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। অহিংসা ও সত্যাগ্রহের দর্শন নিয়ে তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ ভারতীয়কে একত্রিত করেছিলেন। তাঁর জীবন এবং আত্মত্যাগ আজও বিশ্বজুড়ে শান্তি ও মানব মর্যাদার প্রতীক হিসাবে স্মরণীয়।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
প্রধানমন্ত্রী মোদী এদিন বিজয়ঘাটে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মবার্ষিকীতে তাঁর প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি শাস্ত্রীজিকে একজন অসাধারণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রশংসা করেন, যাঁর সততা, বিনয় এবং সংকল্প ভারতকে শক্তিশালী করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি অনুকরণীয় নেতৃত্ব, শক্তি এবং দৃঢ় পদক্ষেপের প্রতীক ছিলেন। তাঁর ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ আহ্বান আমাদের জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা প্রজ্বলিত করেছিল। একটি শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ার প্রচেষ্টায় তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।”
১৯০৪ সালে উত্তর প্রদেশে জন্মগ্রহণকারী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পর দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নীত হন। তাঁর স্বল্প সময়ের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে ভারত পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে লড়েছিল এবং তাঁর সততা ও নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করে। গান্ধীজির শিক্ষায় গভীরভাবে প্রভাবিত শাস্ত্রীজি সাধারণ জীবনযাপন, সততা এবং সাধারণ মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতার জন্য বহুল প্রশংসিত ছিলেন।
লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সম্পর্কে ১০টি কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য
ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জীবন ছিল সরলতা, সংযম ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে দেওয়া হলো:
- জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল লাল বাহাদুর শ্রীবাস্তব, কিন্তু তিনি জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা করে স্কুল জীবনেই তাঁর জাতি-ভিত্তিক উপাধি ‘শ্রীবাস্তব’ বাদ দেন। ১৯২৫ সালে কাশী বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন ও নীতিশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ‘শাস্ত্রী’ (পণ্ডিত) উপাধি লাভ করেন।
- ছাত্রজীবনে তিনি তাঁর ব্যাগ ও কাপড় মাথায় রেখে গঙ্গানদী সাঁতরে পার হতেন।
- উত্তরপ্রদেশের পুলিশ ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ভিড় ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জের পরিবর্তে জল কামান ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া প্রথম ব্যক্তি ছিলেন।
- পরিবহন মন্ত্রী হিসাবে তিনি মহিলাদের কন্ডাক্টর হিসাবে নিয়োগের উদ্যোগ নেন।
- ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর দেশ যখন খাদ্য সংকটের মুখে, তখন তিনি জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে এবং আত্মনির্ভরতা বাড়াতে নাগরিকদের সপ্তাহে একদিন উপবাস পালনের আহ্বান জানান এবং ঐতিহাসিক স্লোগান “জয় জওয়ান, জয় কিষাণ” দেন।
- তাঁর ছেলে তাঁর কর্মস্থলে অন্যায়ভাবে পদোন্নতি পাওয়ায় তিনি বিরক্ত হন এবং সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতি বাতিল করার নির্দেশ দেন।
- ১৯৬২ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে তিনি দুর্নীতি মোকাবিলার জন্য প্রথম কমিটি গঠন করেন।
- তিনি শ্বেত বিপ্লবের ধারণাটিকে বাস্তবায়িত করেন, যার লক্ষ্য ছিল দুধ উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা। তিনি গুজরাটের আনন্দ-এ আমুল দুধ সমবায়কে সমর্থন করেন এবং ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল ডেইরি ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (NDDB) প্রতিষ্ঠা করেন।
- তাঁর মৃত্যুর পর জানা যায় যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেনা ফিয়াট গাড়িটির কিস্তি তিনি তখনও শোধ করছিলেন। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে নেওয়া ৫,০০০ টাকার গাড়ির ঋণ তাঁর স্ত্রী ললিতা তাঁর পেনশন থেকে পরিশোধ করেছিলেন।
- তিনি ছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারত রত্ন (Bharat Ratna) মরণোত্তর লাভকারী প্রথম ব্যক্তি।