ব্যুরো নিউজ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার রাতে এশিয়া কাপ ২০২৫ ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত ৫ উইকেটে রোমাঞ্চকর জয়লাভ করে নবম শিরোপা জেতার পরই মাঠের বাইরের এক নাটকীয় ঘটনা শিরোনামে উঠে আসে। ভারত সরকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্প্রতি সামরিক সংঘাতের আবহে, ভারতীয় খেলোয়াড়েরা এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (ACC) প্রধান এবং পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (PCB) চেয়ারম্যান মোহসিন নাকভি-এর হাত থেকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও মেডেল গ্রহণ করতে স্পষ্টতই অস্বীকার করেন।
ট্রফি প্রদান নিয়ে অচলাবস্থা
ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে পোস্ট-ম্যাচ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হতে দীর্ঘ বিলম্ব হয়। ভারতীয় দল নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে এবং এর ফলে পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরাও ড্রেসিংরুমে থেকে যান, যা স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই সংঘাতপূর্ণ পরিবেশের জেরে নাকভি নাকি ট্রফি এবং মেডেল নিয়ে তাঁর হোটেলের ঘরে চলে যান বলে জানা যায়।
বিসিসিআই (BCCI) সূত্র অনুযায়ী, ভারত এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ড-এর সহ-সভাপতি খালিদ আল জারুনি বা বিসিবি-এর আমিনুল ইসলামের হাত থেকে ট্রফি নিতে প্রস্তুত ছিল। তবে, নাকভি নিজেই ট্রফি তুলে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, যা ভারত প্রত্যাখ্যান করে। এইখানেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে উদ্যোক্তা দেশ বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বোর্ডের আধিকারিকদের পরিবর্তে পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের থেকে কেন নিতে হবে ট্রফি ? পাকিস্তানের স্টেট লেভেলের টুর্নামেন্ট ছিল নাকি ?
BCCI-এর তীব্র প্রতিক্রিয়া
সোমবার ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (BCCI) মোহসিন নাকভির এই আচরণের কড়া নিন্দা করেছে। বিসিসিআই সেক্রেটারি দেবজিৎ সাইকিয়া নাকভির এই কাজকে “সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত” বলে মন্তব্য করেন এবং জানান যে ভারত এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে।
সাইকিয়া ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে বলেন, “ভারত এমন একটি দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, আর সেই দেশের প্রতিনিধি একজন নেতার হাত থেকে আমাদের ট্রফি নেওয়ার কথা… যে দেশটি আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, সেই দেশের প্রতিনিধিত্বকারী একজন ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা ট্রফি নিতে পারি না। তাই আমরা ট্রফি নিতে অস্বীকার করেছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “কিন্তু এর মানে এই নয় যে সেই ভদ্রলোক ট্রফি এবং মেডেল, যা আমাদের দেশকে দেওয়া হবে, তা নিয়ে নিজের হোটেল রুমে চলে যাবেন। এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, এবং আমরা আশা করি তাঁর শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আজকের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এই ভদ্রলোকের আচরণের বিরুদ্ধে আমরা খুব জোরালো প্রতিবাদ জানাতে চলেছি।”
মাঠের লড়াই: তিলক ভার্মার ক্ল্যাচ নক
রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহে এই টুর্নামেন্ট এমনিতেই এশিয়া কাপের ৪১ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিকভাবে চার্জড ছিল। ম্যাচের আগের দিন নির্ধারিত ফটোশুটও বাতিল করা হয়েছিল যখন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আঘা এবং নাকভির সাথে পোজ দিতে অস্বীকার করেন। এমনকি গ্রুপ পর্ব এবং সুপার ফোর পর্বে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা পাক খেলোয়াড়দের সাথে হাত মেলাতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
তবে মাঠে ভারত একটি নাটকীয় প্রত্যাবর্তন করে শিরোপা নিশ্চিত করে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান এক সময় ১১৩/১ (১২.৪ ওভার) থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় স্পিনারদের দাপটে মাত্র ৩৩ রানের বিনিময়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯.১ ওভারে ১৪৬ রানে অল-আউট হয়ে যায়। কুলদীপ যাদব একাই ৪ উইকেট নেন, যার মধ্যে ১৭তম ওভারে ৩টি উইকেট ছিল। জবাবে, ভারত ২০/৩ হয়ে চাপে পড়লেও তিলক ভার্মা ৫৩ বলে অপরাজিত ৬৯ রানের মাস্টারক্লাস ইনিংস খেলেন। সঞ্জু স্যামসন (৫৭ রানের জুটি) এবং শিবম দুবে (২২ বলে ৩৩, ৫৬ রানের জুটি) তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন। শেষ পর্যন্ত রিঙ্কু সিং জয়সূচক বাউন্ডারি মেরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।