ব্যুরো নিউজ ২১ জুলাই ২০২৫ : গত বৃহস্পতিবার পটনার একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি থাকা কুখ্যাত গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচজন শুটারকে কলকাতার একটি গেস্ট হাউস থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই গ্রেফতারি একদিকে যেমন বিহার পুলিশের সাফল্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনই অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয়ে ওঠার প্রবণতা নিয়ে জনমনে এবং গণমাধ্যমে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
আইসিইউতে গ্যাংস্টার খুন ও পলায়ন
ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার সকালে পটনার পারস হাসপাতালে। ২০৯ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে লক্ষ্য করে মূল শুটার তৌসিফ রাজা ও তার চার সঙ্গী পর পর গুলি চালায়। হাসপাতালের বিছানাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে চন্দনের মৃত্যু হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, চন্দন মিশ্র নিজেও একজন কুখ্যাত গ্যাংস্টার ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ১২টি খুনের মামলা চলছিল। পুলিশি নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও কীভাবে দুষ্কৃতীরা হাসপাতালে ঢুকে খুন করে পালিয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খুনের পর দুটি বাইকে করে তারা চম্পট দেয়।
Bihar : বিহারে মহিলাদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩৫% সংরক্ষণ , এবার চুক্তিভিত্তিক পদেও ।
কলকাতায় লুকোনোর চেষ্টা এবং গ্রেফতারি
খুনের পর দুষ্কৃতীরা একটি সাদা রঙের গাড়িতে করে বিহার থেকে পালিয়ে সোজা কলকাতায় চলে আসে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের একটি টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে ওই গাড়িটির ছবি ধরা পড়ে। সেই সূত্র ধরে রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা হাইওয়ের বেশ কিছু ফুটেজ খতিয়ে দেখে জানতে পারেন যে, গাড়িটি পূর্ব কলকাতার আনন্দপুরের একটি নামী বহুতল আবাসনে প্রবেশ করেছে। যদিও সেখানে গাড়িটির সন্ধান মেলেনি, তবে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, গাড়িটি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে আনন্দপুরের একটি গেস্ট হাউসে গিয়েছিল। গেস্ট হাউসের সামনে থেকেই গাড়িটির সন্ধান মেলে। এই সূত্র ধরে গেস্ট হাউসের ভিতর থেকে ৫ জনকে আটক করে এসটিএফ। ধৃতদের মধ্যে তৌসিফ ও নিশু সহ মোট ৫ জন শুটার রয়েছে। গেস্ট হাউসের মালিক জানিয়েছেন, এই ৫ জনের সঙ্গে একজন মহিলাও ছিলেন, তাঁকেও পুলিশ আটক করেছে। বিহার পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ এসটিএফের একটি যৌথ দল নিউ টাউন থেকেও একই মামলায় পাঁচজনকে আটক করেছিল। জানা গেছে, গেস্ট হাউসে পাওয়া সন্দেহভাজনদের মধ্যে একজনের পায়ে আঘাত লেগেছে এবং তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই মামলায় এসটিএফ পটনা এবং বক্সার থেকে আরও তিনজন সাহায্যকারীকে গ্রেফতার করেছে।
হত্যার কারণ: গ্যাংওয়ারের রেষারেষি
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পটনার হাসপাতালে এই খুনের মূল কারণ প্রাক্তন দুই সঙ্গী চন্দন মিশ্র এবং শেরু গ্যাংয়ের নেতা শেরুর মধ্যে পুরনো দ্বন্দ্ব। জেলে থাকাকালীন তাঁদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয় এবং চন্দন পরে ‘শেরু গ্যাং’ নামটি ব্যবহার করে একটি পৃথক গোষ্ঠী গড়ে তোলে। পুলিশের অনুমান, সেই রেষারেষির জেরেই এই হামলা। কে বা কারা এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত এখনও চলছে এবং কলকাতা ও পটনা পুলিশের যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Bihar ; ওয়াকফ আইন সংশোধন বিতর্কে তোষণবাদী কংগ্রেস-আরজেডি’কে জেডি(ইউ)র তীব্র আক্রমণ
পশ্চিমবঙ্গ কি এখন অপরাধীদের আশ্রয়স্থল?
এই ঘটনার পর বিহারের জনসমাজ এবং গণমাধ্যমে আশঙ্কা উঠেছে যে পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে সমাজবিরোধীদের আশ্রয়স্থল বা ‘স্বর্গরাজ্য’ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, চোর, খুনি, ধর্ষক এবং অনুপ্রবেশকারীদের আখড়া এখন পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের প্রশাসনের নিজস্ব কোনো সক্রিয়তা নেই – যদি অন্য রাজ্যের প্রশাসন বা দেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসন তৎপর হয়, অথবা সরাসরি আদালতের আদেশ থাকে, তাহলেই কেবল এই রাজ্যের প্রশাসন কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়, অন্যথায় তারা নিষ্ক্রিয় থাকে। এই ঘটনা আবারও আন্তঃরাজ্য অপরাধের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।