Dilip Ghosh disgruntled Paschimbanga Hindu Sena

ব্যুরো নিউজ ২৩ জুন :  রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘ দিন ধরে সেভাবে শিরোনামে না থাকলেও, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে ঘিরে রাজনৈতিক জল্পনা যেন কিছুতেই থামছে না। সম্প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে জনসমক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসা পর্যন্ত নানা বিষয় তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। এর মধ্যেই নতুন করে গুঞ্জন উঠেছে যে, দিলীপ ঘোষ নাকি একটি পৃথক রাজনৈতিক দল গড়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন। যদিও তিনি এই দাবি অস্বীকার করেছেন, তবে এই গুঞ্জন রাজ্য বিজেপির অন্দরে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে।

নতুন দল গঠন ও ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সেনা’ জল্পনা

কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার সল্টলেকের একটি ফ্ল্যাটে নাকি বিজেপির প্রায় ২৫ জন নেতা-কর্মীকে নিয়ে একটি গোপন বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ। সেই বৈঠকে নাকি একটি নতুন হিন্দুত্ববাদী দল গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দলের সম্ভাব্য নাম হিসেবে ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সেনা’ নামটি উঠে এসেছে। যদিও দিলীপ ঘোষ এই খবর সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে বলেছেন, “এখনও পর্যন্ত এ রকম কোনও খবরই নেই। আমি চুপচাপ বসে বসে সব দেখছি। আমার নামে কত কিছু চলছে।”

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে 

দিঘার সাক্ষাৎ থেকে তৃণমূল যোগদানের জল্পনা

এর আগেও দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা চর্চা ছিল। তাঁর হঠাৎ করে বিয়ে করা এবং দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে সস্ত্রীক বসে গল্প করা—এইসব ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেসে তাঁর সম্ভাব্য যোগদানের জল্পনাকে আরও জোরালো করে তুলেছিল। এমনকি শুভেন্দু অধিকারীসহ বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে দিলীপের এই কাজগুলির সমালোচনাও করেছিলেন।

দলীয় সিদ্ধান্তে অসন্তোষ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল

বিজেপির এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা জানিয়েছেন, দলগত সিদ্ধান্তে একাধিক ইস্যুতে বহু দিন ধরেই দিলীপ ঘোষ অসন্তুষ্ট। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়েছে বলেও রাজনৈতিক মহলে চর্চা রয়েছে। তবে দলের একাংশ মনে করছেন, দিলীপ ঘোষের মতো অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় নেতা হঠাৎ করে এমন পদক্ষেপ করবেন, এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। ওই বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। যাদের নাম উঠে আসছে, তাদের অনেকেই নিজেরা বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। যেমন, বিজেপির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু বলেছেন, “আমি সেদিন সারা দিন বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছিলাম। কোথায় কোথায় গেছি, সেটা খোঁজ করলেই পাওয়া যাবে।” একই রকমভাবে প্রাক্তন সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠক বলেছেন, “এই সময় বিজেপি ছেড়ে কেউ গেলে সেটা বিশ্বাসঘাতকতা হবে।”

এই অস্বীকার সত্ত্বেও, রাজনীতির গুঞ্জনের পালে হাওয়া লেগেছে, বিশেষ করে যখন রাজ্যে ভোটের মরশুম আসন্ন। এই ধরনের আলোচনা দলের ভিতরেই অস্বস্তি বাড়াচ্ছে বলে বিজেপির একাংশ মেনে নিচ্ছেন।

তৃণমূল থেকে আগত নেতাদের প্রতি দিলীপের ক্ষোভ

সম্প্রতি রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে উপস্থিত হয়ে দিলীপ ঘোষ তৃণমূল ও সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের কঠোরভাবে নিশানা করেন। তিনি দাবি করেন, “যাঁরা তৃণমূল, সিপিএম থেকে এসেছেন তাঁরাই হিংসার রাজনীতি করছেন। বিজেপির উদার রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না।” তিনি আরও বলেন, “বসুধৈব কুটুম্বকম্, সবকা সাথ সবকা বিকাশ—অর্থাৎ বিজেপির নীতি পরিষ্কার করে দিয়েছেন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেভাবেই চলা উচিত।” এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, দিলীপ কি নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে আক্রমণ করেছেন?
তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, “আমি আশা করি দিলীপবাবু শুভেন্দু অধিকারীর কথাই বলেছেন। শুভেন্দুবাবুকে দলে ঢুকিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। এবং তিনি দিলীপ ঘোষকে চেয়ার থেকে নামিয়ে নিজে বসেছেন। দিলীপবাবুর কথা ভুল নয়। যত ছাঁট, জঞ্জালকে এনে বিজেপি ফুলদানিতে বসিয়েছেন। যে কারণে বাড়ির মালিক দিলীপ ঘোষ, সেই দুর্গন্ধে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।”
যদিও বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ দিলীপের মন্তব্যের পাল্টা দিয়ে বলেন, দিলীপ ঘোষ দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা গোটা দলের সম্মতি নিয়েই সব সিদ্ধান্ত নেয়। বিজেপির নীতি অনুযায়ী কাজ করছে। যদি কেউ শৃঙ্খলা না মানে তাহলে বিজেপি কথা বলবে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, যারা অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন তারা তো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছাড়পত্র পেয়েই দলে যোগ দিয়েছেন।

আলিপুরদুয়ারের জনসভায় মোদীর বার্তা : ‘নির্মম সরকার’কে উপড়ে ফেলে ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’র ডাক!

দিলীপের ভবিষ্যৎ: প্রাসঙ্গিকতা নাকি নতুন চাল?

রাজ্যের বিজেপি সংগঠন নিয়ে দিলীপ ঘোষকে একাধিকবার ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা গেছে। তবে ২১-এর নির্বাচনের পর থেকে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা বা বিজেপির কর্মীদের সুরক্ষার ব্যাপারে প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে উদাসীন থাকতে দেখা গেছে। রাজ্যের সন্ত্রাসের আবহে তিনি মার্জিত তৃণমূল বিরোধিতা করেছেন।  শুভেন্দু অধিকারীর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছে যে, আপোষ করে তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে না।
বিজেপির সিংহভাগ কর্মী এবং সভাসদ মনে করছেন, ২০২৬ নির্বাচনের আগে দিলীপ ঘোষের এই ধরনের রাজনীতিকে তারা বর্জন করেছেন। তাদের কাছে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যিনি ভিন্ন রাজনীতি থেকে এসেও রাষ্ট্রবাদের পক্ষে প্রকৃত কর্মের মাধ্যমে বিজেপির আসল পরিচয় তুলে ধরেছেন। তাই দিলীপ ঘোষের এই নতুন প্রয়াসকে অনেকেই পদলোভী এবং হিন্দু ঐক্যের পরিপন্থী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। এমন পদক্ষেপ তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতে পারে, কারণ তাদের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক অটুট।
এই পরিস্থিতিতে দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে বাংলার রাজনীতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর