ব্যুরো নিউজ ৩০ জুন: পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে একটি ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় ১৩ জনেরও বেশি সেনা সদস্য নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। আল জাজিরা ও স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে এই খবর জানা গেছে। এই হামলার পর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তুললেও, নয়াদিল্লি কঠোরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
মীর আলিতে আত্মঘাতী হামলা ও হতাহতের ঘটনা
শনিবার (২৮ জুন, ২০২৫) খাইবার পাখতুনখোয়ার মীর আলির খাদী বাজারে এই আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, এক আত্মঘাতী হামলাকারী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের একটি যানের কাছে বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে ধাক্কা দেয়, যার ফলে অন্তত ১৩ জন নিরাপত্তা কর্মী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক সহ অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। এই হামলাকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হওয়া সবচেয়ে মারাত্মক হামলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
অপারেশন সিঁদুরে ৮ F-16, ৪ JF-17 ভূপাতিত; বিপুল ক্ষতি পাক বিমান বাহিনীর
হামলার দায় স্বীকার ও পাকিস্তানের অস্থির নিরাপত্তা পরিস্থিতি
পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি)-এর একটি শাখা, হাফিজ গুল বাহাদুর সশস্ত্র গোষ্ঠী, এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে। তাদের উপ-গোষ্ঠী উসুদ আল-হারবও এর দায় স্বীকার করেছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং নিহত সেনাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
২০২১ সালে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আফগানিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে পাকিস্তানে সহিংসতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ইসলামাবাদ বারবার আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ড পাকিস্তানকে আক্রমণের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ করেছে — যা তালেবান অবশ্য অস্বীকার করে আসছে। নভেম্বর ২০২২-এ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের তীব্র বৃদ্ধি দেখা গেছে। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্চ ২০২৫-এ সন্ত্রাসী ঘটনার সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে, যা নভেম্বর ২০১৪-এর পর প্রথম। গ্লোবাল টেররিজম ইনডেক্স ২০২৫-এ পাকিস্তান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে গত বছরে সন্ত্রাসী হামলায় মৃতের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে ১,০৮১-এ পৌঁছেছে।
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের অভিযোগ ও নয়াদিল্লির কড়া প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে। তবে, রবিবার (২৯ জুন, ২০২৫) ভারত কঠোরভাবে পাকিস্তানের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MEA) এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ওই বিবৃতি দেখেছি, যেখানে ২৮ জুনের ওয়াজিরিস্তানে হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এই বিবৃতিটিকে এর প্রাপ্য ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করছি।”
উল্লেখ্য, এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উত্তর ওয়াজিরিস্তানের স্পিনওয়াম তেহসিলে একটি সন্ত্রাসী হামলায় চারজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছিল। সেই ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলিতে তিনজন সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছিল। তবে ভারতের মদতের এই অভিযোগকে আন্তর্জাতিক মহলে প্রমাণ করে উঠতে পারেনি পাকিস্তান ।