নিজস্ব সংবাদদাতা ০৭ জুলাই ২০২৫ : ছোটবেলায় পড়েছিলাম কেকি এন দারুওয়ালার রোমান্টিক ছোটগল্প ‘লাভ অ্যাক্রস দ্য সল্ট ডেজার্ট’, আর কৈশোরে দেখেছি সেই গল্পকে ভিত্তি করে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র ‘রিফিউজি’। আজ হঠাৎ করে সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল, যখন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতার একটি এক্স (টুইটার) বিবৃতি পড়লাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে একজন জননেতা আমার ছেলেবেলার স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলেন এবং এই কঠিন বাস্তবকে নিয়ে আমাকে ভাবান? চলুন, ঘটনার গভীরে যাওয়া যাক।
আন্তর্জাতিক সীমান্তে এক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা
রাজস্থানের জয়সলমের জেলার তানোট-লঙ্গেওয়ালা রোডের কাছে সাদাওয়ালা সীমান্ত অঞ্চলে ভারত সীমান্তের প্রায় ১২ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দুই পাকিস্তানি নাগরিকের, একজন তরুণ ও একজন তরুণীর, মৃতদেহ আবিষ্কার হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত ব্যক্তিরা ২০ বছরের কম বয়সী এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বলে মনে করা হচ্ছে। মৃতদেহ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গেই বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (BSF) এবং রাজস্থান পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাটি সিল করে দিয়েছে।
মৃতদের পরিচয় এবং তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে একটি যৌথ তদন্ত শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন যে, মৃতদেহগুলোর অবস্থান এবং এতে জড়িত আন্তর্জাতিক দিকটির কারণে বিষয়টি বিশেষভাবে সংবেদনশীল। মৃত্যুর কারণ, এবং কীভাবে এই দুজন অত্যন্ত সুরক্ষিত সীমান্ত অতিক্রম করলেন, তা এখনও অজানা। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাকে জানান, “বিএসএফ এবং স্থানীয় পুলিশ দল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিস্থিতি তদন্ত করছে। অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম, মানব পাচার বা অন্য কোনো অপরাধমূলক কার্যকলাপ সহ সকল দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ফরেনসিক পরীক্ষা এবং পটভূমি যাচাইয়ের পর আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শ্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিবৃতি
বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে যা লিখেছেন, তা আমাকে গভীরভাবে ভাবিয়েছে:
“রবি কুমার এবং শান্তি বাঈ দু’জন পাকিস্তানি হিন্দু। ভারতে আসার প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়েছেন, কিন্তু প্রায় দু’বছর চেষ্টা করেও পাকিস্তানি আধিকারিকদের অসহযোগিতা ও গড়িমসির জন্য কাগজপত্র গোছাতে পারেননি। সব শেষে কোন উপায় না দেখে পায়ে হেঁটে থর মরুভূমি পার করে ভারতে প্রবেশ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন, কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়, মরুভূমির তীব্র দাবদাহে প্রাণ ত্যাগ করেন। পরে তাদের দেহ দেখতে পাওয়া যায় ও জয়সলমীরে ওনাদের আত্মীয়রা খবর পেয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
সারা বিশ্বে হিন্দুদের হোম ল্যান্ড এক মাত্র ভারত। তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও হিন্দুরা উদ্বাস্তু হয়ে এখানে আসতে চায় সসম্মানে জীবনযাপন করার জন্যে, অথচ এখানে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী হিন্দুদের কিছু অংশের এই বিষয়ে সচেতনতা কম; জনগোষ্ঠী বিন্যাস বদলে যাওয়ায় কি বিপদ অপেক্ষা করছে, এখনো উপলব্ধি করতে পারছেন না। আমি সকল হিন্দুদের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করতে চাই, আপনারা উদ্বাস্তু হিন্দুদের পরিণতি লক্ষ্য করুন আর ভাবুন ভারত হিন্দুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তাই এই পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।
আমি রবি কুমার এবং শান্তি বাঈ এর অকাল ও হৃদয় বিদারক মৃত্যুতে অত্যন্ত ব্যথিত, ওনাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।
ওঁ শান্তি 🙏
#হিন্দু_হিন্দু_ভাই_ভাই #Hindu_Hindu_Bhai_Bhai”
ভারতবাসী হওয়ার স্বপ্নে দম্পতির মর্মান্তিক পরিণতি
সম্প্রতি রাজস্থানের জয়সলমেরের কাছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করা এক কিশোর দম্পতির তৃষ্ণা ও পানিশূন্যতায় মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মৃতদেহ শনিবার প্রত্যন্ত বিভিয়াঁ মরুভূমিতে পাওয়া যায়। জয়সলমেরের পুলিশ সুপার সুধীর চৌধুরী রবিবার নিশ্চিত করেছেন যে, ১৭ বছর বয়সী রবি কুমার এবং ১৫ বছর বয়সী শান্তি বাঈ সম্ভবত অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার পর তীব্র পানিশূন্যতা ও তৃষ্ণায় মারা গেছেন।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি মর্মস্পর্শী ছবিতে কুমার-এর মুখের ওপর একটি খালি জেরিক্যান পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের মিরপুর ম্যাথেলো থেকে আসা এই তরুণ দম্পতির মাত্র চার মাস আগে পারিবারিক পছন্দে বিয়ে হয়েছিল। ভারতে একটি নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন নিয়ে তারা ভিসার আবেদন করেছিল, কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।
জেরিক্যান ( জলের পিপ ) মুখের উপর, যা তৃষ্ণার গল্প বলে: অবিচল এই দম্পতি, এক সপ্তাহ আগে কুমারের বাবার সঙ্গে গুরুতর মতবিরোধের পর, দুর্গম মরুভূমি পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একবার সীমান্ত অতিক্রম করার পর, তারা নাকি পথ হারিয়ে ফেলে এবং তাদের জলের সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ায় অসহনীয় গরমে তাদের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে রবিবার একটি মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক ময়নাতদন্ত করা হয়।
হিন্দু পাকিস্তানি ডিসপ্লেসড ইউনিয়ন অ্যান্ড বর্ডার পিপল অর্গানাইজেশনের জেলা সমন্বয়কারী দিলীপ সিং সোধা বলেছেন, “যদি ভারত সরকার মৃতদেহগুলো ফেরত পাঠায়, জয়সলমীরের আত্মীয়রা সেগুলো গ্রহণ করতে প্রস্তুত। যদি মৃতদেহগুলো পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো না হয়, তাহলে আত্মীয়রা হিন্দু প্রথা অনুযায়ী শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে প্রস্তুত।” এসপি চৌধুরী বলেছেন, “এই ঘটনা সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ বা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিতে পারে। পুলিশ এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা একটি ব্যাপক তদন্ত চালাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”
খিলক্ষেতে দুর্গামন্দির ভাঙল ইউনূস প্রশাসন: হিন্দুদের উপর আক্রমণের নতুন দৃষ্টান্ত
সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গে কঠিন বাস্তবের পার্থক্য
ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা লেখা ছোটগল্পে এবং চলচ্চিত্রে আমি দেখেছি যে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কঠিন জীবনের সমস্তটাই ভোগ করে এই ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানরা—কিন্তু যখন বাস্তব এক ঘটনার নিদর্শন দেয়, তখন জানা যায় পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত কোনো হিন্দু দম্পতির মর্মান্তিক পরিণতি!
‘লাভ অ্যাক্রস দ্য সল্ট ডেজার্ট’ ছিল ভারতীয় চোরাচালানকারী নাজাব এবং পাকিস্তানের ফাতিমার গল্প—কীভাবে তারা সীমান্ত প্রহরীদের নজরদারি এবং আক্রমণ উপেক্ষা করে প্রেমের জন্য এই দেশে চলে আসে। তার ওপর ভিত্তি করে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘রিফিউজি’ একইভাবে এক মানব পাচারকারী এজেন্টকে, একজন পাকিস্তানি মেয়ের উদ্ধারকর্তা এবং প্রেমিক আর দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু বাস্তবে চোরাচালানকারী এবং মানব পাচারকারী উভয়ই সমাজবিরোধী, এবং এদের মহিমা কোনো কাজে লাগে না যখন এক নির্দোষ হিন্দু দম্পতি পাকিস্তান প্রশাসনের নেতিবাচক মনোভাবের জেরে, জল তেষ্টায় মরুভূমির তীব্র গরমে দিশাহীন হয়ে মারা যায়।
বাস্তবে ভালোবাসা এবং আশার জয় হয় না, বাস্তবে সব ‘হ্যাপি এন্ডিং’ ট্র্যাজিক হয়ে যায়। এই ভারতবর্ষে থেকে অনেকের মনে হয় যে, পর্যাপ্ত সুবিধা এবং জীবনযাপন অতি সাধারণ। এর থেকেও বেশি সুবিধার স্বার্থে অনেকেই দেশ ত্যাগ করেন বা কোনো এক সুবিধাবাদী সরকার নির্বাচন করেন। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে থাকা প্রত্যেকটি নিপীড়িত হিন্দু জানেন যে, ভারতবর্ষ স্বর্গরাজ্য—যেখানে সশরীরে পদার্পণ বেশিরভাগ সময়েই অধরা থেকে যায়।
এই ঘটনা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আপনার মনেও কি একই রকম প্রশ্ন জাগছে যে, কেন একজন জননেতার একটি বিবৃতি আমাদের ব্যক্তিগত স্মৃতি এবং কঠিন বাস্তবতাকে এভাবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়?
– লেখক শুদ্ধাত্মা