ব্যুরো নিউজ ০৩ অক্টোবর ২০২৫ : জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (UNHRC) ৬০তম অধিবেশনের ৩৪তম বৈঠকে ভারত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পাকিস্তানের ‘ভণ্ডামি’-র কড়া সমালোচনা করেছে। ভারতীয় কূটনীতিক মোহাম্মদ হোসেন পাকিস্তানি প্রতিনিধির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইসলামাবাদ যখন অন্য দেশকে মানবাধিকার নিয়ে জ্ঞান দেয়, তখন তা চরম হাস্যকর।
ভারত-পাকিস্তান বিতর্ক: ‘প্রোপাগান্ডা ছড়ানো বন্ধ করুন’
ভারতীয় কূটনীতিক মোহাম্মদ হোসেন কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “ভারত গভীরভাবে মনে করে যে পাকিস্তানের মতো একটি দেশের অন্যদের মানবাধিকার নিয়ে জ্ঞান দেওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। পাকিস্তান অপপ্রচার ছড়ানো বন্ধ করে বরং তার নিজের মাটিতে সংখ্যালঘুদের উপর যে নিপীড়ন চলছে, তার মোকাবিলা করুক।”
ভারতের এই বিবৃতি এমন সময়ে এলো, যখন কিছুদিন আগেই পাকিস্তান খাইবার পাখতুনখোয়াতে নিজেদের বেসামরিক নাগরিকদের উপর বোমা হামলা চালায়।
- সোমবার খাইবার পাখতুনখোয়ার একটি গ্রামে পাকিস্তানি জেট বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হন। এই হামলার বিষয়ে পাকিস্তান সরকার কোনো বিবৃতি না দিলেও, স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছে।
- গত মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী এবং বালুচ স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (বিএসও-পাজ্জার)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জুবায়ের বেলুচকে হত্যা করে। বালুচ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) এই ঘটনাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে যে জুবায়েরের হত্যাকাণ্ড কাকতালীয় নয়, বরং বালুচ জনগণের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
Balochistan : পাক বিমান হামলার প্রতিশোধ? জাফর এক্সপ্রেসে বিস্ফোরণ; বালুচ লিবারেশন আর্মির হামলা অব্যাহত।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৬০তম অধিবেশনের একটি পার্শ্ব অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য, সিনেটর এবং মানবাধিকার কর্মীরা দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে দুর্বল নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এই অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য আনা মারিয়া সিসিন্ট, নরওয়ের ক্রিশ্চিয়ান কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এরিক সেলে-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের পর এরিক সেলে, যিনি জীবনের একটি অংশ বাংলাদেশে কাটিয়েছেন, সে দেশের পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশে বড় হয়েছি, আমি দেশটিকে ভালোবাসি, কিন্তু গত বছর যা ঘটেছে তাতে আমি বিধ্বস্ত এবং ব্যথিত।” তিনি বাংলাদেশে চরমপন্থীদের কবল থেকে দেশকে রক্ষার জন্য নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানান।
সিসিন্ট নারী ও তরুণীদের পরিস্থিতিকে “খুবই কঠিন” বলে বর্ণনা করেন। তিনি বাংলাদেশে এবং পাকিস্তান থেকে ইতালিতে আসা অভিবাসী নারীদের সমস্যার দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে এদের মধ্যে অনেককে ইতালিতেও দমন-পীড়নের শিকার হতে হয় এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোরখা পরতে বাধ্য করা হয়।
সেলে আরও বলেন, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের, বিশেষত হিন্দু ও খ্রিস্টানদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং পাকিস্তানে—বিশেষ করে বালোচিস্তানে—নারীরা জাতিসংঘের কাছ থেকে পর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়া ছাড়াই কষ্ট পাচ্ছেন।
অনুষ্ঠান শেষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ—উভয় দেশের ওপরই নারী, শিশু ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।



















