ব্যুরো নিউজ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : সম্প্রতি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের “তিরাহ উপত্যকায়” পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক ও নিন্দা সৃষ্টি হয়েছে। বালুচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট (বিএনএম) এই হামলায় শিশুসহ ৩০ জনের বেশি অসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে। একইসঙ্গে তারা পাকিস্তান-কে একটি “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে, ভারতও রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে (UNHRC) পাকিস্তানের কঠোর সমালোচনা করেছে এবং ইসলামাবাদকে “নিজ দেশের জনগণের ওপর বোমা ফেলার” জন্য অভিযুক্ত করেছে।
বিএনএম-এর অভিযোগ: পাকিস্তান একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’
সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিএনএম বলেছে যে, এই ধরনের হামলা পাকিস্তানে বারবার ঘটছে। তারা দাবি করেছে যে, “শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করতে রাষ্ট্রশক্তি নৃশংসতা, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।” বিএনএম-এর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে হামলার ভয়াবহ দৃশ্য এবং নিহত শিশুদের দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বিএনএম আরও অভিযোগ করেছে যে, সম্প্রতি খুজদার জেলার জেহরি তেহসিলে একটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলায় এক পরিবারের চার সদস্য নিহত হয় এবং আরও পাঁচজন আহত হয়। বালুচ ন্যাশনাল মুভমেন্ট এই হামলাকে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অংশ বলে অভিহিত করেছে এবং তারা এই ঘটনার জন্য পাক বাহিনীকে দায়ী করেছে। বিএনএম এই ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছে এবং পশতুন জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে।
ভারত সরকারের নিন্দা: ‘সন্ত্রাস রপ্তানি থেকে বোমা ফেলা’
রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ভারতের কূটনীতিক ক্ষিতিজ ত্যাগী পাকিস্তানের তীব্র সমালোচনা করে বলেন যে, পাকিস্তান নিজের জনগণকে বোমা মেরে হত্যা করছে এবং এটি তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকারের প্রতি অবহেলার প্রতিফলন। তিনি আরও বলেন, “তারা আমাদের ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করার পরিবর্তে নিজেদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করুক, সামরিক শাসনের মুখে থাকা রাজনীতিকে স্বাভাবিক করুক, এবং মানবাধিকারের রেকর্ডের দিকে মনোযোগ দিক। কারণ তারা জাতিসংঘ-অনুমোদিত সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে, সন্ত্রাস রপ্তানি করছে এবং নিজেদের জনগণের ওপর বোমা ফেলছে।”
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন: বিস্ফোরণ নাকি বিমান হামলা?
বিভিন্ন পাকিস্তানি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে, যেমন ডন-এর খবরে, বলা হয়েছে যে তিরাহ উপত্যকায় এই ঘটনা জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। তবে, এই হামলার কারণ নিয়ে বিভিন্ন রকম খবর এসেছে। কিছু সংবাদ সংস্থার দাবি, পাকিস্তানি তালেবান যোদ্ধাদের একটি কম্পাউন্ডে বিস্ফোরক তৈরির সামগ্রী মজুত ছিল এবং তা থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৪ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, অন্যান্য সূত্র এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিওগুলো থেকে মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বিমান হামলায় এই ঘটনা ঘটেছে।
উপসংহার: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা
এই ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। পাকিস্তান সরকার এবং তার সামরিক বাহিনীর উপর জনগণের আস্থার সংকট স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনার দিকে নজর রাখছে এবং অনেকেই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। একই সময়ে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনাও বৃদ্ধি পেয়েছে।