ব্যুরো নিউজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার হাই-ভোল্টেজ ম্যাচটি শুধু মাঠের লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং কিছু বিতর্কিত ঘটনা এবং অঙ্গভঙ্গির কারণে এটি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি এবং ভারতের ব্যাটসম্যানদের পাল্টা জবাব এই ম্যাচকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।
মাঠের বিতর্ক: ‘আপত্তিকর’ অঙ্গভঙ্গি ও বাদানুবাদ
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ওপেনার সাহেবজাদা ফারহান অর্ধশতক করার পর তার উদযাপনের ভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তিনি ব্যাটটিকে একটি একে-৪৭ রাইফেলের মতো করে গুলি করার ভঙ্গি করেন, যা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। পরে ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় পাকিস্তানের পেসার হারিস রউফ সীমানার কাছে দাঁড়িয়ে একটি বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার মতো অঙ্গভঙ্গি করেন, যা দর্শকদের উসকে দেয়।
অন্যদিকে, ভারতীয় ওপেনার অভিষেক শর্মাও এই উত্তেজনায় পিছিয়ে ছিলেন না। তিনি পাকিস্তানের বোলারদের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখানোর পাশাপাশি মাঠের বাইরেও তা বজায় রাখেন। ম্যাচের পর তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লেখেন, “তোমরা কথা বলো, আমরা জিতি।” অভিষেকের এই মন্তব্যটি হারিস রউফ এবং শাহীন আফ্রিদির সঙ্গে তার বাদানুবাদের পরে এসেছে। অভিষেক জানান, পাকিস্তানি বোলাররা অকারণে তাকে কটূক্তি করছিল, যা তার পছন্দ হয়নি।
ভারতের ইনিংসের শুরুতেই শাহীন আফ্রিদিকে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকানোর পর অভিষেককে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যায়। এই ঘটনার পর হারিস রউফ এবং শাহীন আফ্রিদির সঙ্গে অভিষেকের তীব্র বাদানুবাদ হয়।
Asia Cup Cricket 2025 : বাবর আজমের দলকে ৬ উইকেটে হারাল ভারত, অভিষেকের ঝোড়ো ইনিংসে সুপার ফোরে জয়
সূর্যকুমারের মন্তব্য: ‘এটি আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়’
ম্যাচে ৬ উইকেটে জয়ের পর ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব সংবাদ সম্মেলনে এই ‘ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা’র ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, “আপনাদের এই ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ নিয়ে প্রশ্ন করা বন্ধ করা উচিত। যদি দুটি দল ১৫ বা ২০টি ম্যাচ খেলে এবং ফলাফল ৭-৭ বা ৮-৭ হয়, তবে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলা যায়। ১৩-০, ১০-১, আমার সঠিক পরিসংখ্যান মনে নেই, কিন্তু এটি আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়।” তিনি আরও বলেন যে, ভারত তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছে।
অভিষেক শর্মা (৩৯ বলে ৭৪) এবং শুভমান গিলের (২৮ বলে ৪৭) ১০৫ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ ভারতের জয় সহজ করে দেয়। যদিও পরে হার্দিক পান্ডিয়া এবং তিলক ভার্মা ঠান্ডা মাথায় ম্যাচটি শেষ করেন।
ভারতের রাজনীতিতে বিরোধী জোটের ‘ পাকিস্তানপন্থী ‘ প্রতিক্রিয়া
ম্যাচের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শিবসেনা (ইউবিটি)-র নেতা সঞ্জয় রাউত, যিনি আগে ম্যাচটি বয়কট করার আহ্বান জানিয়েছিলেন, বলেন যে এই অঙ্গভঙ্গিগুলো “বিসিসিআই এবং মোদী সরকারের মুখে থুথু”। তিনি এক্সে লেখেন, “অর্ধশতক করে ব্যাটটি একে-৪৭ এর মতো ধরে গুলি চালানোর ভঙ্গি! বিসিসিআই এবং মোদী সরকারের মুখে এই থুথু চরম অপমান। ভারতের এই অপমানের জন্য জয় শাহ ভারত রত্ন পাওয়ার যোগ্য।”
সমাজবাদী পার্টির নেতা শরদ সরণ ফারহানের কাজের নিন্দা করে বলেন, “তিনি আমাদের দেশকে অতীতের সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন… যদি মোদী চাইতেন, তাহলে কি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলত?”
বিজেপি নেতা অমিত মালভিয়া শরদ সরণের সমালোচনার জবাবে বিরোধী দলের অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করেন। তিনি লেখেন, “মজার বিষয় হলো, যে বিরোধী দল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না খেলার জন্য চিৎকার করছিল, তারাই আবার ম্যাচ দেখতে বসেছিল, এমনকি সাহেবজাদা ফারহানের অঙ্গভঙ্গিতে তারা আনন্দও করেছে! মনে হচ্ছে যেন শহিদ আফ্রিদি আগেই রাহুল গান্ধীকে কিছু ফিসফিস করে বলে গেছেন… এছাড়া কংগ্রেসের এই অতি-তৎপরতার আর কোনো ব্যাখ্যা নেই!”