শর্মিলা চন্দ্র, ১৫ মে : সপ্তাহান্তে আপনি যদি হেরিটেজ রিসোর্টে ছুটি কাটাতে চান এবং রাজকীয় পরিবেশে বিশ্রাম নিতে চান, তাহলে আপনার পরবর্তী গন্তব্য হতে হবে ইটাচুনা রাজবাড়ি। এছাড়া আড়াইশ বছরের পুরোনো রাজবাড়ির মধ্যে থাকাটা কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়।
ঘুরে আসি : বর্ষায় আপনার গন্তব্য হোক কালিম্পংয়ের কিছু অফবিট জায়গা
হেরিটেজ রিসোর্ট সঙ্গে রাজকীয় পরিবেশ বেশ আকর্ষণীয়
এই ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদটি কলকাতা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে হুগলি জেলার খানিয়ান গ্রাম ইটাচুনাতে অবস্থিত। ইটাচুনা রাজবাড়ির আক্ষরিক অর্থ হল ইট (ইট) এবং চুন (চুন) প্রাসাদ। এটি ঐতিহ্য ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ।
রাজবাড়িতে গেলে একটি বিশাল গেট দিয়ে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে একটি সুন্দর বাগান ঘেরা একটি সুনিপুণ লন আপনাকে স্বাগত জানাবে এবং প্রধান উঠানে সাদা খিলানযুক্ত প্রবেশপথের দিকে নিয়ে যাবে। রাজবাড়িটি পাঁচটি মহল্লায় বিভক্ত- একটি গ্রাম আদালত, একটি ব্যালে নাচের হল, রান্নাঘর, গেস্ট হাউস এবং মহিলাদের জন্য একটি অন্দর মহল, ছাদ এবং বাগান।
রাজবাড়িতে খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। ভেজ এবং নন-ভেজ দুই ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। ‘সুক্ত’ থেকে ‘বেগুনি’, ‘লুচি’, ‘ছোলার ডাল’ থেকে ‘আলু পোস্তো’, ‘মাছের কালিয়া’ থেকে জমকালো ‘কষা মংস’, ‘চাটনি’, ‘পাপড়’ এবং ‘ রাজভোগ থেকে ‘মিস্টি দই’ সবকিছুই পেয়ে যাবে। শেষ রয়েছে ‘মিস্টি পান’। এখানে ঐতিহ্যবাহী পোশাকে মহিলারা খাবার পরিবেশন করেন।
বিকেলের দিকে পুরো রাজবাড়ি ঘুরে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে। প্রতি সন্ধ্যায় একটি নির্দেশিত রাজবাড়ি ভ্রমণেরও আয়োজন করা হয়। রাজবাড়ির ঘরগুলো কিন্তু খুবই সুন্দর। প্রতিটি রুম সুন্দরভাবে আয়না, চেয়ার এবং টেবিল দিয়ে সজ্জিত। কক্ষগুলি প্রাচীন আসবাবপত্র দিয়ে সজ্জিত এবং অতিথিদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আধুনিক করা হয়েছে। প্রতিটি রুমে প্রশস্ত এবং আধুনিক ওয়াশরুমও রয়েছে।
এখানে প্রধান উঠান জুড়ে, ‘ঠাকুর দালান’ রয়েছে। যেখানে পারিবারিক দেবতা ‘শ্রীধর জিউ’ অথবা পূর্বপুরুষের দেবতা নারায়ন রয়েছেন। এখনও প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ম মেনে পুজো করা হয়। সন্ধ্যার আরতি দেখতে বেশ ভালো লাগে। আরতির সময় অতিথিদের পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার লোকজনেরাও আসেন।
ঠাকুর দালান সংলগ্ন বিশাল উঠানে সুন্দর ঢালাই লোহার প্রদীপ যা সন্ধ্যায় জ্বললে পরিবেশকে সত্যিই নস্টালজিক করে তোলে। সঙ্গে সুন্দর ঝাড়বাতি এবং সর্পিল সিঁড়িতে লাগানো প্রাচীন সজ্জিত হাতে টানা পাখা আরেকটি আকর্ষণ। কমনরুমে ক্যারামের ব্যবস্থাও রয়েছে।
অন্দর মহল চত্বরের ঠিক মাঝখানে আপনি একটি টেবিল টেনিস বোর্ড পাবেন। ব্যাডমিন্টন কোর্টও রয়েছে। এমনকি একটি বিশাল চেসবোর্ডও পেয়ে যাবেন। এখানে ‘খিরকি পুকুর’ নামে পরিচিত একটি বড় পুকুর রয়েছে। যেটি একসময় রাজপরিবারের মহিলাদের স্নানের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
রাজবাড়ির সুসজ্জিত কক্ষগুলি ছাড়াও এই জমকালো রাজবাড়ির পিছনের উঠোনে মাটির কুঁড়েঘর রয়েছে। কুঁড়েঘরের কাছে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ রয়েছে। সেই গাছের নামানুসারে কক্ষগুলির নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- অপরাজিতা, মাধবীলতা, কনকলতা ও ঝুমকোলতা। বাড়ির পিছনের দিকের উঠোনে অনেক গবাদি পশু রয়েছে। রাজহাঁস, হাঁস, পায়রা, ঘুঘু, মুরগি, খরগোশ।
রাজবাড়ির সোপান একটি দর্শনীয় স্থান। এখান থেকে সূর্যাস্তের সাক্ষী হতে পারেন পাশাপাশি আপনি একটি পেতে পারেন।আশেপাশের গ্রামের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যও উপলদ্ধি করতে পারেন। এখানে সন্ধ্যা আরতির পর চা ও জলখাবার দেওয়া হয়।
এখানে রাতের খাবার ৮.৩০ মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়। সকালে আপনার ঘুম ভাঙবে সুমধুর বাঁশির আওয়াজে। সকালে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্রেকফাস্ট সেরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন।
কীভাবে যাবেন:
ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে যে কোনও বর্ধমানগামী ট্রেন বা মেমরি বা পান্ডুয়া লোকালে চড়ে খানিয়ান রেলস্টেশনে যেতে হবে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা টোটো নিয়ে পৌঁছতে হবে ইটাচুনা রাজবাড়ি।