ব্যুরো নিউজ ২ই জুন  : উত্তর সিকিমের মংগন জেলা ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া লাগাতার অতি ভারী বৃষ্টি এবং শনিবার সন্ধ্যার মেঘভাঙা বৃষ্টি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চুংথাং থেকে শুরু করে ফিদাং পর্যন্ত একাধিক স্থানে ব্যাপক ধস নেমেছে, যার ফলে সমস্ত সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই বিপর্যয়ে ভারতীয় সেনার একটি মিলিটারি ক্যাম্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে ৩ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে এবং কমপক্ষে ৬ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, লাচেন ও লাচুংয়ে প্রায় ১৪৬৫ জন পর্যটক আটকে পড়েছেন।


ভয়াবহ ধস ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় বাইরে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না, যা উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। চুংথাং থেকে সাঙ্কালান যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গেছে। একটানা বৃষ্টির কারণে মেরামতির কাজও শুরু করা যাচ্ছে না। প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ শুরু করতে বৃষ্টি থামা প্রয়োজন, কিন্তু আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সেই আশাও ক্ষীণ।

প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা


পর্যটকদের দুর্দশা: আটকে ১৪৬৫ জন

লাচেনে প্রায় ১১৫ জন এবং লাচুংয়ে প্রায় ১৩৫০ জন পর্যটক আটকা পড়েছেন। এদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকরাও রয়েছেন বলে পিটিআই সূত্রে খবর। সিকিম সরকার নির্দেশ জারি করে পর্যটকদের হোটেল ও হোম-স্টেতেই নিরাপদে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। যদিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে তাদের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। উত্তর সিকিমের জন্য আপাতত কোনো নতুন পর্যটক পারমিট দেওয়া হচ্ছে না। সোম এবং মঙ্গলবার বন্ধ থাকছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক, যা পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে।


মিলিটারি ক্যাম্পে ধস: ৩ জওয়ানের মৃত্যু, ৬ জন নিখোঁজ

দুর্যোগ কবলিত সিকিমে আরও এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সন্ধ্যায় ধসের জেরে সিকিমের ছাতেন এলাকায় ভারতীয় সেনার একটি মিলিটারি ক্যাম্প ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সোমবার পর্যন্ত ধস কবলিত এলাকা থেকে ৩ জওয়ানের দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ৪ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তাঁরা আহত হয়েছেন। তবে এখনও কমপক্ষে ৬ জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন। প্রতিরক্ষা আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও উদ্ধারকারী দল একটানা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।


তিস্তা নদীতে গাড়ি দুর্ঘটনা ও নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি

এর আগে, বৃহস্পতিবার চুংথাং থেকে মুন্সিথাং যাওয়ার পথে একটি পর্যটকবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ১০০০ ফুট নিচে তিস্তা নদীতে পড়ে যায়। গাড়িতে থাকা ১১ জন পর্যটকের মধ্যে দু’জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ওড়িশার বাসিন্দা শ্যাম সুপ্রতিম নায়েক ও সৈরাজ জানা বর্তমানে গ্যাংটকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তবে, এই দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং এখনও ৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ পর্যটকদের মধ্যে রয়েছেন ওড়িশার অজিতকুমার নায়েক, সুনীতা নায়েক, সুশীল জানা, ইতশ্রী জানা। ত্রিপুরার দেবজ্যোতি দেব এবং স্বপ্ননীল দেব, ও উত্তরপ্রদেশের কৈশেলেন্দ্র প্রতাপ সিংহ ও অঙ্কিতা সিংহ। গাড়িটির চালক পাসাং ডেনু শেরপা সিকিমের সিংহিক এলাকার বাসিন্দা। শনিবার সকাল থেকেই জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) উদ্ধার তল্লাশি চালাচ্ছে, যদিও টানা বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।


তিস্তার জলস্তর বৃদ্ধি: নতুন প্লাবনের আশঙ্কা

টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার জলস্তর দ্রুত বাড়ছে। এর ফলে নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিদাং সহ আরও কিছু এলাকা জলের নিচে চলে যেতে পারে। এমনকি সিংতাম শহরও যদি বৃষ্টিপাত এভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তর সিকিমে পর্যটকদের গাড়ি খাদে পড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা , গুরুদংমার থেকে ফেরার পথে !


কেন্দ্রীয় সরকারের আশ্বাস ও যৌথ উদ্ধারকাজ

সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী যৌথভাবে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযানে বারবার বিঘ্ন ঘটছে। সব মিলিয়ে পুরো উত্তর সিকিম এখন কার্যত বিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত। প্রাকৃতিক সহায়তা না পেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা এবং উদ্ধার কার্য প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর