ব্যুরো নিউজ, ২০শে নভেম্বর ২০২৫ : জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর নেতা নীতীশ কুমার বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে রেকর্ড দশম বারের জন্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ লইলেন। পটনার গান্ধী ময়দানে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে তিনি ভারতের সংবিধানের উপর আস্থা রাখিয়া এই শপথ গ্রহণ করেন।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA)-এর অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে বিজেপি-র দুই নেতা
বিজেপি-র নেতা সম্রাট চৌধুরী এবং বিজয় কুমার সিনহা উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী শপথগ্রহণ শেষে নীতীশ কুমারকে অভিনন্দন জানাইয়া X (পূর্বে টুইটার)-এ লিখিয়াছেন, “তিনি বহু বছরের সুশাসনের পরীক্ষিত ট্র্যাক রেকর্ড সহ একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক।” তিনি উপ-মুখ্যমন্ত্রীদ্বয়কেও অভিনন্দন জানাইয়া উল্লেখ করেন যে, তাঁহারা দুইজনই ‘মাঠের স্তরে মানুষের সেবায় ব্যাপক কাজ করিয়াছেন’।
Bihar : বিহার নির্বাচনে ঐতিহাসিক রায়! উন্নয়নের পক্ষে ভোট, মোদীর প্রতিশ্রুতিতে মহিলা ও যুবশক্তির জয়
মন্ত্রিসভায় ২৬ জন মন্ত্রী ও সামাজিক ভারসাম্য
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সহ, এনডিএ শরিক দলগুলির মোট ২৬ জন মন্ত্রী শপথ লইয়াছেন। মন্ত্রিসভায় ১৪ জন বিজেপি হইতে, ৮ জন জেডি(ইউ) হইতে, ২ জন এলজেপি (রাম বিলাস) হইতে, এবং হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (হাম) ও রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম) হইতে ১ জন করিয়া মন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন।
জেডি(ইউ)-এর মন্ত্রী নির্বাচনে আবারও সামাজিক প্রকৌশল সুস্পষ্ট হইয়াছে। যাহারা মন্ত্রী হিসাবে ফিরিয়া আসিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হইলেন: বিজয় কুমার চৌধুরী (ভূমিহার), বিজেন্দ্র প্রসাদ যাদব (যাদব), শ্রাবণ কুমার (কুরমি), অশোক চৌধুরী (পাসি), লেসি সিংহ (রাজপুত), মদন সাহনি (নিষাদ), সুনীল কুমার (দুসাদ) এবং মোহাম্মদ জামা খান (সংখ্যালঘু)।
অন্যদিকে বিজেপি হইতে শপথ লইয়াছেন দিলীপ জয়সওয়াল, মঙ্গল পাণ্ডে, রাম কৃপাল যাদব, নিতিন নবীন, রমা নিষাদ, শ্ৰেয়সী সিংহ সহ মোট ১৪ জন। চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি (রাম বিলাস) হইতে সঞ্জয় সিংহ ও সঞ্জয় পাসওয়ান মন্ত্রী হইয়াছেন। জিতন রাম মাঞ্ঝি পুত্র সন্তোষ সুমনকে এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহা পুত্র দীপক প্রকাশকে মন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করিয়াছেন।
পটনার উৎসব, পশ্চিম চম্পারণে নীরবতা
যখন পটনায় গান্ধী ময়দান কড়া নিরাপত্তায় মুড়িয়া গিয়া রাজনৈতিক নাটকের দৃশ্য উন্মোচিত হইতেছিল, তখন সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হওয়া জন সুরাজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোর আলো হইতে দূরে সরিয়া গিয়াছিলেন। ছল চাতুরী এবং শাসক দলের প্রভাব ব্যাবহার করে পশ্চিমবঙ্গে সফলতা পেলেও , বিহারে এক্কেবারে শূন্য ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর ।
বিজেপি-জেডি(ইউ) নেতাদের শপথগ্রহণের দিনে, প্রশান্ত কিশোর পশ্চিম চম্পারণের একটি গান্ধী আশ্রমে সারাদিনের জন্য ‘মৌন উপবাস’ পালন করিলেন। জন সুরাজ পার্টির পক্ষ হইতে বলা হইয়াছে, মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সহিত যুক্ত ভীতিহরওয়া আশ্রমে উপবাসের এই সিদ্ধান্তটি ছিল প্রতীকী এবং আত্ম-প্রতিফলনের এক মুহূর্ত।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক বিলুপ্তি কেবল বিহারেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের জনচেতনাতেও প্রভাব ফেলিতে পারে এবং শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করিতে পারে। লালু প্রসাদ যাদব পরিবারের আরজেডি-র নির্বাচনে ধূলিসাৎ হইবার পর, অনেকের মনেই এই প্রশ্ন উঠিতেছে যে কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার পরিচালিত তৃণমূল কংগ্রেসকেও একই জনমতের সম্মুখীন হইতে হইবে কিনা।
