ব্যুরো নিউজ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সরকারের পতনের পর দেশটিতে এক নতুন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ‘জেন-জি বিপ্লব’ নামে পরিচিত তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ওলি মঙ্গলবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে, হাজার হাজার তরুণ একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি-কে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত করেছেন।
একটি সাক্ষাৎকারে ৭২ বছর বয়সী সুশীলা কার্কি এই দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন। তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক আন্দোলনটি জেন-জি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং তারা স্বল্প সময়ের জন্য আমাকে সরকার পরিচালনা করার দায়িত্ব দিতে বিশ্বাস করেছে।” তিনি আরও বলেন যে, যদি তাকে সরকার পরিচালনার জন্য বেছে নেওয়া হয়, তবে তার প্রথম কাজ হবে বিক্ষোভে প্রাণ হারানোদের সম্মান জানানো। সেনা ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত এবং ১,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
কার্কি ভারতের সমর্থন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে বলেন, “আমি মোদী জি-কে নমস্কার করি। মোদী জি সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা আছে।” ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারতের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে। ভারত সব সময় নেপালকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে।”
ওলি’র সরকার পতন: ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জল্পনা
নেপালি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি একটি বিবৃতিতে বলেছেন যে ভারত এবং ভগবান রাম সম্পর্কে ‘সঠিক কথা বলা’ই তার পতনের কারণ। তিনি বলেন, “আমি জোর দিয়েছি যে আমাদের দেশে ব্যবসা করা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিকে এখানকার নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত হতে হবে। আমি জোর দিয়েছি যে লিপুলেক, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরা আমাদের। আমি জোর দিয়েছি যে শাস্ত্র মতে ভগবান শ্রীরামের জন্ম ভারতে নয়, নেপালে হয়েছিল। যদি আমি এই বিষয়গুলিতে আপস করতাম… তাহলে আমার আরও অনেক সুযোগ থাকত… আমি অনেক কিছু অর্জন করতে পারতাম।” যদিও এই বিবৃতির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
Nepal : নেপালে গণবিক্ষোভ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব
সেনা ও জেন-জি’র মধ্যে অবিশ্বাস
ওলি’র পদত্যাগের পর সরকার গঠনের জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর। তবে, এই আলোচনা নিয়ে জেন-জি’র সদস্য, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তারা আশঙ্কা করছেন যে সেনাবাহিনী একটি সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেলকে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন।
এদিকে, ফেডারেশন অফ নেপালি জার্নালিস্ট (FNJ) সামরিক বা অ-সামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া সমাধানের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, “রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের সমস্ত প্রচেষ্টা রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে আসতে হবে, সামরিক সদর দপ্তর থেকে নয়।”
উত্তেজনার পারদ চরিয়েছে: ভাইরাল ভিডিওতে হুমকির অভিযোগ
সরকার গঠন নিয়ে চলমান অচলাবস্থার মধ্যে একটি ভাইরাল ভিডিওতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ‘হামি নেপাল’ এনজিওর প্রধান এবং জেন-জি আন্দোলনের মুখ হিসেবে বিবেচিত সুধন গুরুং-কে এই ভিডিওতে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাউডেল এবং সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগডেলকে প্রাণনাশের হুমকি দিতে শোনা যাচ্ছে।
ভিডিওতে গুরুং একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন এবং বলছেন যে যদি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করা না হয়, তবে তিনি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে একটি মিছিল নিয়ে যাবেন। এছাড়াও গুরুং রাষ্ট্রপতিকে গালিগালাজ করছেন এবং বলছেন, “যদি সুশীলা কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী না করা হয়, তাহলে বুকে গুলি নিতে প্রস্তুত থাকুন।” তিনি আরও বলেন, “আমরা এমনিতেই মরছি এবং মরতে প্রস্তুত।”
এই ভিডিওটি ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং প্রশ্ন উঠেছে যে, এমন ভয়ানক হুমকির পেছনে কে বা কারা রয়েছে। এই বিস্ফোরক ভিডিওর পর সুশীলা কার্কির নাম নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে সুশীলা কার্কি, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহ এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ কুলমান ঘিসিং-এর নাম নিয়ে আলোচনা চলছে।