ব্যুরো নিউজ ২১ মে : ন্যাশনাল হেরাল্ড অর্থপাচার মামলায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে ১৪২ কোটি টাকা ‘অপরাধলব্ধ আয়’ (proceeds of crime) গ্রহণের গুরুতর অভিযোগ এনেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বুধবার (২১ মে, ২০২৫) দিল্লির একটি আদালতে এই বিস্ফোরক দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। এই অভিযোগের ফলে গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার গুরুত্ব আরও বাড়ল।
ইডির মূল অভিযোগ
ইডি আদালতের কাছে জানিয়েছে যে, ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অর্থপাচারের একটি ‘প্রাথমিক মামলা’ (prima facie case) গঠিত হয়েছে। ইডির অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস.ভি. রাজু আদালতে প্রাথমিক শুনানির সময় এই দাবি করেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বরে ইডি ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর সঙ্গে যুক্ত ৭৫১.৯ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আগে পর্যন্ত অভিযুক্তরা ‘অপরাধলব্ধ আয়’ উপভোগ করছিলেন। ইডির অভিযোগ, গান্ধী পরিবার শুধুমাত্র অপরাধলব্ধ আয় গ্রহণই করেনি, বরং তা নিজেদের দখলে রেখেও অর্থপাচার করেছে।
চার্জশিট ও তদন্তের সূত্রপাত
ইডি সম্প্রতি এই মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। এর আগে, ২০১৪ সালের ২৬ জুন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী একটি ব্যক্তিগত অভিযোগ দায়ের করার পর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত বিষয়টি আমলে নেয়। এরপরই ২০২১ সালে ইডি এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। ইডির দাখিল করা চার্জশিটে সোনিয়া গান্ধীকে ১ নম্বর অভিযুক্ত এবং রাহুল গান্ধীকে ২ নম্বর অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইডি দাবি করেছে, কংগ্রেসের তহবিল (জনগণের অনুদান সহ) ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে এজেএল-এর (অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড) সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ ইয়ং ইন্ডিয়ান লিমিটেড (YIL)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যার প্রধান সুবিধাভোগী সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী।
মামলার প্রেক্ষাপট
ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রটি ১৯৩৮ সালে জওহরলাল নেহেরু এবং অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড (এজেএল) দ্বারা প্রকাশিত হতো, যা একটি অলাভজনক সংস্থা। আর্থিক সমস্যার কারণে ২০০৮ সালে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে ইয়ং ইন্ডিয়ান লিমিটেড (YIL) নামে একটি অলাভজনক সংস্থা গঠিত হয়, যার প্রধান শেয়ারহোল্ডার ছিলেন সোনিয়া গান্ধী (৩৮%) এবং রাহুল গান্ধী (৩৮%)। এজেএল-এর কাছে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) ৯০.২৫ কোটি টাকার সুদমুক্ত ঋণ ছিল। ২০১০ সালে এআইসিসি এই ঋণটি ৫০ লক্ষ টাকায় ওয়াইআইএল-কে হস্তান্তর করে। এর মাধ্যমে ওয়াইআইএল এজেএল-এর ৯৯% মালিকানা লাভ করে, যা এজেএল-এর মূল্যবান স্থাবর সম্পত্তির (যেমন দিল্লি, মুম্বাই, লখনউ-এর সম্পত্তি) ওপর ওয়াইআইএল-এর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী ২০১২ সালের অভিযোগে দাবি করেন যে এজেএল-এর সম্পত্তির মূল্য ২০০০ কোটি টাকারও বেশি ছিল।
আদালতের নির্দেশ ও পরবর্তী পদক্ষেপ: বিশেষ বিচারক বিশাল গগনে ইডিকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর কাছে চার্জশিটের একটি কপি সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যার অভিযোগের ভিত্তিতে এই মামলা শুরু হয়েছিল। সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীর আইনজীবীরা আদালতের কাছে মামলাটি আগামী মাসে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন, যাতে তাঁরা ইডির অভিযোগের জবাবে তাঁদের বক্তব্য প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ট সময় পান। মামলাটির শুনানি বর্তমানে চলছে। এই মামলার রায় ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গভীর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।