ব্যুরো নিউজ ১১ আগস্ট ২০২৫ : আরজি করের নির্যাতিতার অভিভাবকদের ডাকে ও কালীগঞ্জের মৃত নাবালিকা তামান্নার পরিবারের সমর্থনে নবান্ন অভিযানের জেরে শনিবার উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতা ও হাওড়ার রাজপথ। পুলিশের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়া, মারধর করা এবং শাঁখা-পলা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন আরজি করের নির্যাতিতার মা। এই অভিযানে যোগ দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং শত শত মানুষ আহত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
আরজি করের নির্যাতিতার মায়ের বিস্ফোরক অভিযোগ
নবান্ন অভিযানের মিছিলে যোগ দিয়ে আরজি করের নির্যাতিতার মা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাড়ি থেকে কলকাতার পথে আসার সময় একাধিকবার পুলিশ তাদের গাড়ি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে। ডোরিনা ক্রসিং থেকে নবান্নের দিকে মিছিল শুরু করার পর পুলিশ তাকে মারধর করে এবং তার হাতের শাঁখা ভেঙে দেয়। তিনি বলেন, “৪-৫ জন পুলিশ আমাকে মেরেছে। আমি নিরস্ত্র। মমতা আমার নবান্ন যাওয়া নিয়ে কেন সমস্যা করছেন? আমি শুধু আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।” এই ঘটনার পর তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। পরিবার আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে এবং হাইকোর্টে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে।
শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিবাদ, পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ
এই অভিযানে সামিল হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখান। তিনি বলেন, “প্রথমে মেয়েকে মেরেছে, এখন তার মাকে মারার চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ।” তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ বিজেপি নেতা-কর্মী ও বিধায়কদেরও মারধর করেছে, যার ফলে শতাধিক মানুষ জখম হয়েছেন এবং তারা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুভেন্দু বলেন, “মমতা ধ্বংস হবে। পুতনা রাক্ষসী। গণতন্ত্র নেই। লেডি কিম হলেন মমতা।” তিনি আরও জানান, এই অভিযানের ডাক দিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা ও মা, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কখন অভিযান শেষ হবে।
কালীগঞ্জের তামান্নার পরিবারের যোগদান
নবান্ন অভিযানে শুধু আরজি করের পরিবারই নয়, নদীয়ার কালীগঞ্জের মৃত নাবালিকা তামান্না খাতুনের মা ও বাবাও যোগ দিয়েছেন। গত উপনির্বাচনে ভোট পরবর্তী হিংসায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় তামান্নার। এখনও পর্যন্ত ২৪ জন অভিযুক্তের মধ্যে ১৪ জন অধরা, যার প্রতিবাদে তারা ন্যায় বিচার চেয়ে এই অভিযানে সামিল হয়েছেন। মেয়ের ছবি বুকে নিয়ে ট্রেনে করে পলাশী থেকে কলকাতায় এসেছেন তারা। মিছিলে যোগ দেওয়ার আগে তারা স্টেশন চত্বরে যাত্রীদের হাতে রাখিও বেঁধে দেন।
Nabanna : অভয়ার পরিবারকে নবান্ন অভিযানের অনুমতি দিল হাইকোর্ট, তবে পুলিশি নজরদারিতে !
হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের গড়িমসি
উল্লেখ্য, আরজি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে একটি হলফনামা জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার আরও সময় চেয়ে আবেদন করে, যার ফলে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী সোমবার, আগস্ট ১১-তে নির্ধারিত হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে পুলিশের হামলার বিষয়টিও উত্থাপন করা হতে পারে। এই নবান্ন অভিযান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের একটি বড় প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।