ব্যুরো নিউজ ২১ মে : গত মাসে মুর্শিদাবাদে সংঘটিত হিংসার ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও অনুপস্থিতির কড়া সমালোচনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত একটি কমিটি। কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই হামলার পিছনে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ইন্ধন ছিল এবং পুলিশ সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় ও অনুপস্থিত ছিল।

মূল অভিযোগ ও কমিটির গঠন: গত ৮ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে ওয়াকফ বিল সংশোধনের প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদে ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে তিনজনের মৃত্যু হয়। হাইকোর্ট এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন তদারকির জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশনের (NHRC) রেজিস্ট্রার যোগিন্দর সিং, পশ্চিমবঙ্গ লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির (WBLSA) সদস্য সচিব সত্য অর্ণব ঘোষাল এবং পশ্চিমবঙ্গ জুডিশিয়াল সার্ভিসের রেজিস্ট্রার সৌগত চক্রবর্তীকে নিয়ে গঠিত এই কমিটি সম্প্রতি তাদের রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিয়েছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে থাকছেন না ইউসুফ পাঠান, তৃণমূল সাংসদের সিদ্ধান্ত

রিপোর্টের মূল পর্যবেক্ষণ:

  • পুলিশের ভূমিকা: কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ১১ এপ্রিল ধুুলিয়ানে মূল হামলা চলার সময় স্থানীয় পুলিশ “সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় এবং অনুপস্থিত” ছিল। একাধিকবার ফোন করা হলেও পুলিশ সাড়া দেয়নি বলেও অভিযোগ।
  • স্থানীয় নেতার জড়িত থাকা: রিপোর্টে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মেহবুব আলমের জড়িত থাকার কথা বলা হয়েছে। যদিও মেহবুব আলম বর্তমানে কাউন্সিলর নন, তিনি একসময় ধুলিয়ান পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “স্থানীয় কাউন্সিলর মেহবুব আলম ১১ এপ্রিল দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসেছিলেন। বিধায়কও সেদিন (১১ এপ্রিল) উপস্থিত ছিলেন।”
  • ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাট: রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুষ্কৃতীরা একটি জলের বোতলের দোকান ভাঙচুর করে নগদ ১২,০০০-১৩,০০০ টাকা লুট করে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের একটি শপিং মল সম্পূর্ণরূপে লুট হয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ঘোষপাড়ায় ২৯টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি গার্মেন্টস মলও লুঠ হয়েছে। বেটবোনা গ্রামের অন্তত ১১৩টি বাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক বাসিন্দা মালদায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
  • হত্যা ও হুমকি: রিপোর্টে হরগোবিন্দ দাস (৭৪) এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাস (৪০)-এর হত্যাকাণ্ডেরও উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা বাড়ির মূল দরজা ভেঙে তাদের ওপর কুড়াল দিয়ে আঘাত করে এবং একজন লোক তাদের মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল। বেটবোনা গ্রামের বাসিন্দাদের উপর দুষ্কৃতীদের ক্রমাগত হুমকি থাকার কথাও রিপোর্টে বলা হয়েছে।

মন্দির ধ্বংস ও সুরক্ষার দাবি: হিংসার সময় মন্দিরও ধ্বংস করা হয়েছিল বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা তাদের সুরক্ষার জন্য স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতির দাবি জানিয়েছেন।

কলকাতায় তিরঙ্গা যাত্রা ,বিএসএফ জওয়ান মুক্তি, ভুয়ো খবর দমন, সন্ত্রাসবাদ নিপাতন : মোদীর নেতৃত্বে দেশ সুরক্ষিত দাবি শুভেন্দু অধিকারীর

আদালতের নির্দেশ ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: কলকাতা হাইকোর্ট গত শুক্রবার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, মুর্শিদাবাদের সংঘর্ষে যাদের জীবন ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর একটি ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে যে, ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের অধীনে ১.২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সকলের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। আদালত রাজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় একটি স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্পের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদন বিবেচনা করতেও বলেছে। একই সাথে, স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (SIT)-কে “অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে” তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র জয় প্রকাশ মজুমদার এই রিপোর্ট সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনায় ২১৬ জনেরও বেশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই রিপোর্ট জমা পড়ার পর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর