moon
ব্যুরো নিউজ, ৩এপ্রিলঃ চাঁদে শুধুমাত্র অভিযান চালানো নয়, এবার সেখানে স্থায়ী বসতি গড়ার পরিকল্পনা চলছে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই চন্দ্রপৃষ্ঠে টেকসই স্থাপনা তৈরির উপায় খুঁজছেন। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে একদল ভারতীয় গবেষক অভিনব পদ্ধতিতে চাঁদের মাটি থেকে ইট তৈরির পরিকল্পনা করেছেন। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc)-এর বিজ্ঞানীরা এমন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যেখানে ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্যে চন্দ্রপৃষ্ঠের মাটি বা ‘রেগোলিথ’ থেকে শক্তিশালী ইট তৈরি সম্ভব হবে।

রাজনীতি না ধর্ম? ওয়াকফ বিল নিয়ে সংসদে তীব্র সংঘর্ষ, কার স্বার্থসিদ্ধি?

ব্যাক্টেরিয়া ও নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে ইট তৈরির চ্যালেঞ্জ, এই অভিনব গবেষণার পেছনে মূলত রয়েছে ‘এস. পাস্তুরি’ নামক ব্যাক্টেরিয়া। এই ব্যাক্টেরিয়া ইউরিয়া ও ক্যালসিয়ামের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কঠিন ক্যালসিয়াম কার্বোনেট তৈরি করতে সক্ষম। এরপর সেই উপাদানকে বিশেষ আঠার সঙ্গে মিশিয়ে ইটের আকৃতি দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে তৈরি ইট চন্দ্রপৃষ্ঠে টেকসই হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।তবে শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়ার ওপর নির্ভর না করে আরও একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এটি হল ‘সিনটেরিং’ প্রযুক্তি, যেখানে চাঁদের মাটি ও পলিভিনাইল অ্যালকোহলের মিশ্রণকে উচ্চ তাপে উত্তপ্ত করে ইটের কাঠামো তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে অনেক ইট তৈরি করা যায়, যা নির্মাণ প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।

পাহাড়ের ফিসফিসানি আর হ্রদের গোপন গল্প, মিরিকে কি লুকিয়ে আছে জেনে নিন

চাঁদের কঠিন আবহাওয়া কি এই প্রযুক্তির জন্য বাধা?

চাঁদের পরিবেশ অত্যন্ত প্রতিকূল। সেখানে তাপমাত্রার তারতম্য ভয়ঙ্কর—একই দিনে মাইনাস ১৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করতে পারে। এর পাশাপাশি, সৌরঝড় ও মহাকাশীয় রশ্মি চন্দ্রপৃষ্ঠের কাঠামোর ক্ষতি করতে পারে। গবেষক কৌশিক বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, ‘সিনটেরিং’ পদ্ধতিতে তৈরি ইট শক্ত হলেও ভঙ্গুর হতে পারে, ফলে ফাটল ধরার সম্ভাবনা থেকে যায়।এই সমস্যার সমাধানেও ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে ফাটল সৃষ্টি করে ‘এস. পাস্তুরি’ ব্যাক্টেরিয়া, চন্দ্রের মাটি এবং আঠার মিশ্রণ প্রয়োগ করা হলে দেখা গেছে, ইটের গঠন আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এমনকি, ১৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও এই ইট টিকে থাকতে সক্ষম।তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন যে, ব্যাক্টেরিয়া চাঁদের প্রকৃত পরিবেশে কতটা কার্যকর হবে। এটি পরীক্ষা করার জন্য গবেষকরা পরিকল্পনা করেছেন, ব্যাক্টেরিয়ার নমুনা গগনযানে করে মহাকাশে পাঠানো হবে, যাতে বাস্তব চন্দ্রপরিবেশে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা যায়।

এই গবেষণা সফল হলে চাঁদে স্থায়ী মানব বসতির পরিকল্পনা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এটি এক বিপ্লব আনতে পারে। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি শুধু চাঁদের মাটিতে নয়, মঙ্গল কিংবা অন্যান্য গ্রহেও গৃহনির্মাণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই গবেষণা কবে বাস্তবে রূপ নেয় এবং মানুষ আদৌ চাঁদে পাকাপাকি বসবাস শুরু করতে পারে কি না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর