ব্যুরো নিউজ ১২ আগস্ট ২০২৫ : জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে। এরপর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান অসীম মুনির ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (PPP) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো ভারতের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেছেন। এর পাল্টা জবাবে ভারতের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া আসছে।
পাকিস্তানের নেতাদের হুঁশিয়ারি
পাহালগাম হামলার পর ভারত সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিলাওয়াল ভুট্টো সম্প্রতি পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সিন্ধুর ওপর আক্রমণ ঘোষণা করেন, তাহলে তিনি আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের সভ্যতার ওপর আক্রমণ করছেন।” তিনি পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দায়ী করেন এবং দিল্লি যদি চুক্তি স্থগিত রাখে, তাহলে যুদ্ধের হুমকি দেন।
এর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান অসীম মুনির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক অনুষ্ঠানে ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হুমকির ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, যদি ভারত সিন্ধু নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান তার জল অধিকার “যেকোনো মূল্যে” রক্ষা করবে। তিনি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের “শিরার ধমনী” হিসাবে উল্লেখ করে বলেন যে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং একটি অমীমাংসিত আন্তর্জাতিক ইস্যু।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা হুমকি
পাকিস্তান নেতাদের এই কড়া মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও জবাব এসেছে ভারত থেকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে ঐতিহাসিক এই চুক্তি আর কোনোভাবেই পুনর্বহাল করা হবে না।
বিলাওয়াল ভুট্টোর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি নেতা ও অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “যদি তারা এমন কথা বলতে থাকে এবং আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়, তাহলে একের পর এক ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র চলবে।” তিনি ব্যঙ্গ করে আরও বলেন, “আমরা এমন একটি বাঁধ নির্মাণের কথাও ভেবেছি, যেখানে ১৪০ কোটি মানুষ মূত্রত্যাগ করবে। এরপর আমরা যখন বাঁধটি খুলে দেব, তখন একটি সুনামি আসবে।” মিঠুন স্পষ্ট করে বলেন যে তার এই মন্তব্য পাকিস্তানের জনগণের উদ্দেশ্যে নয়, বরং বিলাওয়াল ভুট্টোর জন্য।
পটভূমি: সিন্ধু জল চুক্তি ও সাম্প্রতিক ঘটনা
১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু নদের জল বণ্টন করে। তবে ২২ এপ্রিল পাহালগামের সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করে। এই হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তখন ঘোষণা করেছিলেন যে “রক্ত এবং জল একসাথে প্রবাহিত হতে পারে না।” এই ঘটনার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে জল চুক্তি নিয়ে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে।
আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তান এই চুক্তি পুনর্বহালের জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু ভারত তার অবস্থান থেকে সরতে নারাজ। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও সম্প্রতি এই চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে মন্তব্য করেছেন।