ব্যুরো নিউজ ৩০ মে : ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার এক গুরুতর অভিযোগে বুধবার (২৮ মে, ২০২৫) দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেল মেওয়াত থেকে কাসিম (৩৪) নামে এক ধর্মযাজক কে গ্রেপ্তার করেছে। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ধৃত এই ব্যক্তি ভারতীয় সিম কার্ড ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাকিস্তানে পাচার করতেন বলে জানা গেছে। এই গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশজুড়ে ব্যাপক অনুসন্ধানে নেমেছে।

পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ ও আইএসআই-এর সাথে সরাসরি যোগাযোগ:
পুলিশ সূত্রে খবর, রাজস্থানের ধিং জেলার গাংগোরা গ্রামের বাসিন্দা কাসিম গত এক বছরে দুবার পাকিস্তানে গিয়েছিল। সেখানে সে গুপ্তচরবৃত্তির প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তারা জানান, কাসিম প্রথমে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এবং পরে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে প্রায় তিন মাস পাকিস্তানে কাটিয়েছিল। এই সফরগুলির সময় সে সরাসরি আইএসআই কর্মকর্তা এবং হ্যান্ডলারদের সংস্পর্শে আসে, যারা তাকে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বিভাগ সম্পর্কিত সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ ও পাচার করার প্রশিক্ষণ দেয়।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

ভারতীয় সিম কার্ড পাচার ও তথ্যের অপব্যবহার
 পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, কাসিম ভারতীয় সিম কার্ড পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল। আইএসআই অপারেটিভরা সেই সিম কার্ডগুলি ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভারতে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করত এবং গোপন তথ্য আদায় করত। এটি ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মৌলভির ভূমিকা ও উগ্রপন্থায় জড়িত থাকার অভিযোগ
 পেশায় একজন ইসলামিক ধর্মগুরু (মৌলভি) কাসিম এর আগে দিল্লিতে বসবাস করত এবং জয়পুরের সাথেও তার সংযোগ ছিল বলে জানা গেছে। তদন্তকারীরা প্রকাশ করেছেন যে, ভারতে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে উগ্রপন্থায় প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তার দ্বারা প্রভাবিত ব্যক্তিদের সনাক্ত এবং খুঁজে বের করার জন্য অভিযান চলছে। এই বিষয়টি তার কার্যক্রমের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেয়।

তদন্তের সূত্রপাত ও গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া
 ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে কাসিমের গ্রেপ্তার হয়। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, পাকিস্তানে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে বেশ কয়েকটি ভারতীয় মোবাইল নম্বর ব্যবহৃত হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই কাসিম একজন মূল সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে আসে।
প্রাথমিকভাবে ২৩শে মে রাজস্থান পুলিশ তাকে আটক করে এবং এরপর একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

‘দক্ষিণায় পাক অধিকৃত কাশ্মির চাই’: সেনাপ্রধানকে জগদ্গুরু রামভদ্রাচার্য্যের স্পষ্ট বার্তা

পারিবারিক যোগসূত্র ও সম্ভাব্য আরও গ্রেপ্তার
 কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাসিমের এক খালা পাকিস্তানে থাকেন এবং সম্ভবত তার পাকিস্তান সফরের ক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করেছেন। তার ভাইও আইএসআই-এর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে এবং বর্তমানে সে পলাতক।
দিল্লি পুলিশ এই মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুতর বলে বর্ণনা করেছে। তাদের মতে, কাসিম যে তথ্য পাচার করছিল, তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করতে পারত। তদন্ত যত এগোবে, আগামী দিনে আরও গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই গ্রেপ্তারের ফলে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জগুলো আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর