আমরা চঞ্চল এবং অস্থিরতার যুগে বসবাস করছি। এমন সময়ে মন খুব সর্বদাই উদ্বেগ ও আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়ায় ভরে থাকে । সমাজের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে মানসিক স্থিতিশীলতা অর্জনের চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ ।
১৩শ শতাব্দীর বৌদ্ধ ভিক্ষু নিচিরেন পরামর্শ দিয়েছেন, “মনকে পরিচালনার অধিকারী হও, মন যেন তোমাকে পরিচালনা না করে,” !
বর্তমানে, তথ্যের অনবরত আদান প্রদানে আমরা প্রায়ই মানসিক দুর্বলতায় ভুগি। তবে মনকে নিয়ন্ত্রণের মাদ্ধম আমাদের মানসিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে। এটিকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে এমন এক শৃঙ্খলা হিসেবে, যেখানে আমরা অতীতের অনুশোচনা বা ভবিষ্যতের ভয়ের ভার মুছে ফেলে বর্তমানকালের প্রতি আমাদের লক্ষ্য নিবদ্ধ করি। এর ফলে আমরা আমাদের অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞা ও সহানুভূতির সন্ধান করতে শুরু করি—একটি অন্তর্মুখী রূপান্তর যা নিজেকে ও অন্যকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়।
মহাভারত আমাদেরকে মননশীল নেতৃত্বের একটি গভীর উদাহরণ দেয় যুধিষ্ঠির ও যক্ষের গল্প দ্বারা।
তাঁর ভাইদের হঠাৎ মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে এবং যক্ষ দ্বারা জীবনমৃত্যু প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে, যুধিষ্ঠির ভয় বা শোকের আবেগে কাজ করেন না। বরং তিনি তার মনকে শান্ত করে বিবেচনামূলক স্পষ্টতা নিয়ে উত্তর দেন। যখন মাত্র একজন ভাইকে ফেরত আনার বরদান দেওয়া হয়, তিনি শক্তিশালী কোন ভাইকে বাছাই না করে তাঁর সৎভাই নকুলকে বেছে নেন, যা তাঁর মায়ের এবং সৎমায়ের, উভয়ের প্রতি বিচারের প্রকাশ।
এই সিদ্ধান্ত দ্বারা মুগ্ধ হয়ে, যক্ষ পরবর্তীতে যুধিষ্ঠিরের সকল ভাইকে পুনরায় জীবিত করেন। কারণ যুধিষ্ঠিরের সিদ্ধান্ত আবেগ দ্বারা চালিত ছিল না, বরং অন্যদের প্রতি সহানুভূতি ও ন্যায়বিচারের প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি দ্বারা আবদ্ধ ।
এই গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রকৃত মননশীলতা কেবল শান্ত থাকা নয়—এটি সেই শান্তি কাজে লাগিয়ে প্রজ্ঞা এবং সামাজিক দায়বোধের সাথে কাজ করার নাম। অশান্তির সময়ে ভয় বা স্বার্থপরতায় প্রলোভিত হওয়া সহজ। কিন্তু যখন আমরা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হই, তখন আমাদের অন্তর্দৃষ্টি ব্যাপ্ত হয় এবং আমরা আমাদের বিচক্ষণতা অনুসারে কাজ করতে পারি।
দৈনিক ভিত্তিতে আমরা এমন সংকটপূর্ণ মুহূর্তের সম্মুখীন হই, যেখানে আমাদের অশান্ত যুগের বিশৃঙ্খলা ,আমাদের ববিবেচনা ভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দাবি করে। মনকে স্থির রাখা হলো প্রকৃত সুখ ও পরিপূর্ণতার দিকে প্রথম ধাপ। পরিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করার উপায় হলো সবার সঙ্গে বিকাশের চেতনায় ও মানবিক সমাজ গঠনে অবদান রাখার মনোভঙ্গি নিয়ে এক মহৎ অটল জীবনাবস্থা গড়ে তোলা। এইভাবে প্রতিকূলতাও মূল্যবান সৃষ্টির সুযোগে পরিণত হতে পারে।