মেঘালয়ে মধুছন্দ্রিমা হত্যাকাণ্ড

ব্যুরো নিউজ ৯ জুন : ইন্দোরের বাসিন্দা রাজা রঘুবংশীর মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমা যাত্রা শেষ হয়েছিল এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে। অভিযোগ উঠেছে, তার স্ত্রী সোনম ভাড়া করা খুনিদের দিয়ে রাজাকে হত্যা করিয়েছেন। এই ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে পুলিশকে হতবাক করে দিয়েছে এবং দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। অবশেষে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের, যার মধ্যে সোনমও রয়েছেন, গ্রেফতার করা হয়েছে। নিচে ঘটনার বিস্তারিত সময়রেখা এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

ঘটনার বিস্তারিত সময়রেখা:

  • ১১ মে: রাজা রঘুবংশী এবং সোনমের বিয়ে হয় মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে।
  • ২০ মে: নবদম্পতি মধুচন্দ্রিমার জন্য মেঘালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
  • ২২ মে: দম্পতি পর্যটন কেন্দ্র সোহরা (চেরাপুঞ্জি) এর কাছে মাওলাখিয়াত গ্রামে একটি ভাড়া করা স্কুটারে পৌঁছান।
  • ২৩ মে: স্থানীয় গাইড অ্যালবার্ট পিডে তাদের শেষবার দেখেন। তিনি সকাল ১০টা নাগাদ নংরিয়াত থেকে মাওলাখিয়াত পর্যন্ত প্রায় ৩,০০০ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখেন তাদের। তাদের সাথে তিনজন হিন্দিভাষী পুরুষ ছিল, যাদের স্থানীয় বলে মনে হয়নি গাইডের। তিনি আগের দিন দম্পতিকে বিখ্যাত লিভিং রুট ব্রিজ পরিদর্শনের জন্য তার পরিষেবা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
  • ২৪ মে: দম্পতির স্কুটারটি শিলং এবং সোহরার মাঝখানে একটি রাস্তার ধারের ক্যাফের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার পর মেঘালয় পুলিশ তল্লাশি অভিযান শুরু করে।
  • ২ জুন: এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পর, রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ উইসাওডং জলপ্রপাতের কাছে একটি গভীর খাদে পাওয়া যায়। তার সোনার আংটি এবং চেন গায়েব ছিল, যা থেকে হত্যার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
  • ৩ জুন: রাজার দেহ যেখানে পাওয়া গিয়েছিল তার কাছাকাছি একটি রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র (ম্যাচেট) উদ্ধার করা হয়।
  • ৫ জুন: মাওকমা গ্রামে একটি রেইনকোট পাওয়া যায়, যা দম্পতির বলে ধারণা করা হয়। এটি সোহরারিম এবং খাদের মাঝখানে অবস্থিত, যা সন্দেহের মাত্রা আরও বাড়িয়ে তোলে।
  • ৭-৮ জুন: মেঘালয় পুলিশের গঠিত একটি বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করে। উত্তরপ্রদেশ থেকে একজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয় এবং আরও দুজনকে ইন্দোর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরই মধ্যে, সোনম উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরের নন্দগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন এবং পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
  • ৯ জুন: মেঘালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ ইদাসিনহা নংরাং নিশ্চিত করেন যে সোনম এই ট্রিপের সময় তার স্বামীকে হত্যার জন্য খুনিদের ভাড়া করেছিলেন। তিনি আরও জানান, মধ্যপ্রদেশে অন্যান্য সন্দেহভাজনদের ধরার জন্য অভিযান এখনও চলছে।বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত: ছাড়াল জাপানকে

বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য:

  • মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড কে সাংমা: তিনি এই মামলায় দ্রুত সাফল্যের জন্য পুলিশকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি X-এ লিখেছেন, “৭ দিনের মধ্যে একটি বড় সাফল্য অর্জিত হয়েছে… দারুণ কাজ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে তিন হামলাকারী মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা এবং একজন অভিযুক্ত এখনও পলাতক।
  • মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব: তিনি শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সিবিআই তদন্তের জন্য অনুরোধ করেছেন।
  • সোনমের বাবা, দেবী সিং:  তার মেয়ের নির্দোষ দাবি করেছেন এবং মেঘালয় পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে নির্দোষ। আমার মেয়ের উপর আমার আস্থা আছে। সে এটা করতে পারে না… তাদের বিয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে হয়েছিল।”
    তিনি আরও অভিযোগ করেন, “মেঘালয় সরকার শুরু থেকেই মিথ্যা বলছে… রাজা রঘুবংশীর হত্যাকাণ্ডে মেঘালয় পুলিশ জড়িত।”
    তিনি এই তদন্তকে বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে অভিহিত করেছেন এবং সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তার দাবি, সোনমকে মেঘালয়ে গ্রেফতার করা হয়নি, বরং তিনি নিজেই গাজিপুরে একটি ধাবায় এসেছিলেন এবং সেখান থেকে তার ভাইকে ফোন করেছিলেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে।
  • রাজা রঘুবংশীর ভাই, বিপুল রঘুবংশী: তিনি জানিয়েছেন যে সোনম দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা তাকে অভিযুক্ত মানবেন না। তবে তিনি এও বলেছেন, যদি সোনম জড়িত থাকেন, তাহলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি মেঘালয় পুলিশের তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এবং সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।প্রবীণ নাগরিকদের জন্য কেন্দ্রের ঐতিহাসিক ঘোষণা: ১৫ জুন থেকে সারাদেশে বিনামূল্যে ভ্রমণের সুবিধা

তদন্তের অগ্রগতি ও নতুন তথ্য:

পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, সোনম তার স্বামীকে হত্যার জন্য ভাড়াটে খুনিদের নিযুক্ত করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল এটি একটি ডাকাতি, কিন্তু এখন এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ‘লাভ ট্র্যাঙ্গেল’ অর্থাৎ ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে। বলা হচ্ছে, সোনমের রাজ কুশওয়াহা নামের এক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিল, কিন্তু বিয়ে হয়েছিল রাজার সাথে। মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাসিনহা নংরাং নিশ্চিত করেছেন যে, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সোনমের দ্বারা ভাড়া করা হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোনমকে গাজিপুরে একটি ধাবা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাকে মেঘালয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

এই ঘটনাটি দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং উভয় পরিবার ও কর্তৃপক্ষকে হতবাক করে দিয়েছে। তদন্ত এখনও চলছে এবং আরও অভিযুক্তদের ধরার জন্য অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর