লাল রংয়ের এলএইচবি কোচ যুক্ত ট্রেন যা তৈরি করা হয়েছিল দুর্ঘটনাকে এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কিন্তু বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনা নাড়িয়ে দিল সকলকে, কেন এই ট্রেনের এত বড় বিপর্যয় হল কেন পারল না এই ট্রেন ব্রেক কোষে থেমে যেতে , কেন ট্রেনের কোচ গুলি দেশলাইয়ের বাক্সর মত রেললাইনচ্যুত হল এবং উল্টে গেল বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে নানা দিক থেকে। এই এলএসবি যুক্ত কোচে কি এমন ছিল যাতে দেশের তাবড় তাবড় ইঞ্জিনিয়ারদের ভরসা ছিল এই কোচের ওপর তারই বিস্তারিত জানব।

ভারতীয় রেলের যাত্রীবাহী এই উন্নত মানের কোচগুলো জার্মানির ‘লিংক হফম্যান বুশ’ (LHB) নামের এক বিখ্যাত কম্পানী উৎপাদন করেছে। যদিও এই সংস্থার বর্তমান নাম আলাদা। ১৯৯৮ সালে অ্যালস্টম (Alstom) নামেরএকটি কোম্পানী এর সিংহভাগ শেয়ার কিনে নেয়। তখন নাম হয় Alstom LHB GmbH. এরপর আবার নাম পাল্টায় যখন পুরোপুরি ভাবে সংস্থার মালিকানা কিনে নেয় ঐ কম্পানী। সংস্থার বর্তমান নাম অ্যালস্টম ট্রান্সপোর্ট ডয়েশল্যাণ্ড। যদিও বিশ্বজুড়ে এই কোম্পানির তৈরি কোচগুলো এখনো এলএইচবি কোচ নামেই পরিচিত।
ভারতের কাপুরথালাতে অবস্থিত এই সংস্থার রেল কোচ ফ্যাক্টরি তৈরীর কারখানাতেই তৈরি হয়েছে এই কোচ। ২০০০ সাল থেকে ব্যবহার শুরু হয় এই কোচের। লাল রংয়ের এই কোচ তৈরি করতে খরচ পরে ১.৫ থেকে ২ কোটি টাকা ।এই কোচের ট্রেন ঘন্টায় ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে, তবে ১৬০ কিলোমিটার /ঘন্টা পর্যন্ত অপারেটিং গতির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।১৮০  কিলোমিটার / ঘণ্টা পর্যন্ত পরীক্ষা করা হয়েছে এই ট্রেনের গতিবেগকে। এই কোচের ট্রেনটির দৈর্ঘ্য ২৩.৫৪ মিটার এবং প্রস্থ ৩.২৪ মিটার যার মানে এতে উন্নততর যাত্রী ক্ষমতা রয়েছে। এসি চেয়ার কারের ওজন ৩৯.৫ টন এদেরকে অ্যান্টিক টেলিস্কপিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার অর্থ সংঘর্ষের সময় এরা উল্টে যাবে না ,প্রধানত মুখোমুখি সংঘর্ষে । এই কোচ গুলি স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি এবং ভিতরটা অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি যার ফলে পুরনো দিনের রেকের তুলনায় এগুলি অনেক হালকা। প্রতিটি কোচে উন্নততর গতিতে দক্ষ ব্রেকিংয়ের জন্য একটি অ্যাডভান্স নিউমেটিক ডিস্ক ব্রেক সিস্টেম রয়েছে যার ফলে ব্রেক কষলে স্বল্প দূরত্বে গিয়ে থেমে যাবে ট্রেনটি। এলএইচবি কোচের উন্নত double সাসপেনশন ব্যবস্থা আছে। সেকেন্ডারি সাসপেনশনে হাইড্রোলিক পদ্ধতির ব্যবহার হয়েছে এবং একটি এক্সট্রা Y shape এর সাসপেনশন আছে যার ফলে ট্রেনের মধ্যে যাত্রী কোন জার্কিং অনুভব করবে না। এখানে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নততর ক্ষমতা সম্পন্ন এবং তা একটি মাইক্রো প্রেসারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় যা গ্রীষ্ম এবং শীতের সময় যাত্রীদের অধিক আরাম দেয় । প্রতিটি কোচে সর্বাধিক ৬০ ডেসিবেল শব্দ উৎপন্ন হয় ফলে প্রচলিত কোচগুলি থেকে এই এল এইচবি কোচের আওয়াজ অনেক কম হয়।
এত উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রেন যেখানে অ্যাক্সিডেন্টের বিপুল ক্ষয়ক্ষতিকে এড়ানোর কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে, সেখানে এত বড় দুর্ঘটনা কি করে ঘটে গেল সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। দুর্ঘটনার পর রেলের আধিকারিক বিবৃতি দিয়েছেন যে এল এইচ বি কোচের ট্রেন খুবই সুরক্ষিত একটি ট্রেন এবং এই ধরনের ট্রেনের বিগত দিনের এক্সিডেন্ট যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে হাই স্পিড এ থাকা সত্ত্বেও কোচগুলি লাইনের বাইরে চলে আসেনিএবং উল্টে যায়নি এর ফলে যাত্রীদের বেশি ক্ষতি হয়নি।(EVM News)

 

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর