ব্যুরো নিউজ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : লেহ-তে সপ্তাহব্যাপী চলা ব্যাপক প্রতিবাদের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, লাদাখের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে । বুধবার বিকেল ৪টার পর থেকে লাদাখে আর কোনও সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে সরকার দাবি করেছে। মন্ত্রক আরও জানায়, মানুষ যাতে পুরনো বা উস্কানিমূলক ভিডিও প্রচার করে পরিস্থিতিকে আবারও উত্তপ্ত না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
সংঘর্ষের কারণ:
লাদাখে সহিংস প্রতিবাদের শুরু হয়েছিল পরিবেশকর্মী সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে। তিনি গত ৩৫ দিন ধরে লাদাখের রাজ্য মর্যাদা এবং সংবিধানের ৬ষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে অনশন করছিলেন। এই দাবিগুলো নিয়ে সরকার এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MHA) জানিয়েছে যে, উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি (HPC) এবং অন্যান্য উপ-কমিটির মাধ্যমে আলোচনার প্রক্রিয়া অনেক ফলপ্রসূ হয়েছিল। এই আলোচনার ফলে লাদাখের তফসিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণ ৪৪% থেকে বাড়িয়ে ৮৪% করা হয়েছে, স্থানীয় পরিষদে মহিলাদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এবং ভুওতি ও পুরগি ভাষাকে সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ১,৮০০টি চাকরির পদ পূরণের জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
Kashmir : পাহালগামে ২৬ জন পর্যটক হত্যায় জড়িত লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিদের মদতদাতা গ্রেফতার
সহিংসতা শুরু:
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ হঠাৎ সহিংস হয়ে ওঠে ২৪শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে। একদল উত্তেজিত জনতা, যাদেরকে কেন্দ্র সরকার সোনম ওয়াংচুকের উস্কানিমূলক মন্তব্যের দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করছে, তারা অনশনস্থল ছেড়ে সরকারি অফিস এবং একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলা চালায়। তারা অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং নিরাপত্তা কর্মীদের উপর হামলা করে। এই হামলায় ৩০ জনেরও বেশি পুলিশ ও সিআরপিএফ কর্মী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে হয়, যার ফলে ৪ জন প্রতিবাদকারী নিহত এবং ৭০ জনেরও বেশি আহত হন। এর পরে লেহ জেলায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
Ladakh : দেশের প্রথম হাইড্রোজেন-চালিত বাস পরিষেবা চালু হল লাদাখে !
সোনম ওয়াংচুক এবং বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু:
সোনম ওয়াংচুক, যিনি বিখ্যাত বলিউড ছবি ‘3 ইডিয়টস’-এর সঙ্গে যুক্ত এবং রামোন ম্যাগসেসে পুরষ্কারপ্রাপ্ত, তার বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তিনি ‘আরব বসন্ত’ এবং নেপালের ‘জেন জি’ আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে মানুষকে উসকেছেন। সোনম ওয়াংচুক মোহাম্মদ ইউনুসের বন্ধুও, যিনি বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণের পর ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন।
ওয়াংচুককে লাদাখের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাকেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য জমি বরাদ্দ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি সেই জমি তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যবহার করেননি। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে বিক্ষোভ হলে সরকার সেই জমি বরাদ্দ বাতিল করে। এরপরই তিনি অনশন শুরু করেন। যদিও লাদাখের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর প্রাথমিক দাবি ছিল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা, তবে রাজ্য মর্যাদার দাবিকে একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। লাদাখের জনসংখ্যা মাত্র ৩ লক্ষ হওয়ায় এটি রাজ্য হওয়ার যোগ্য নাও হতে পারে। পুরো আন্দোলনটি বিজেপি-কে লক্ষ্য করে রাজনৈতিক রূপ ধারণ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।