Kolkata high court allow Nabanna avijaan

ব্যুরো নিউজ ৮ আগস্ট ২০২৫ : আর জি কর কাণ্ডের নির্যাতিতা চিকিৎসকের পরিবারের ডাকা নবান্ন অভিযানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আগামী ৯ আগস্ট এই অভিযানের অনুমতি দিলেও বিচারপতি সুজয় পাল ও স্মিতা দাস দে-র বেঞ্চ কড়া নির্দেশ দিয়েছে যে, এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হতে হবে এবং কোনও সরকারি সম্পত্তি বা পুলিশ কর্মীদের ক্ষতি করা যাবে না।

জনস্বার্থ মামলা ও আদালতের পর্যবেক্ষণ

আগামী শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা-মা। এই কর্মসূচি জনজীবন ব্যাহত করতে পারে, এই আশঙ্কায় হাওড়ার এক বাসিন্দা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। মামলাকারীর দাবি ছিল, নবান্ন অভিযান হলে অফিসযাত্রী এবং স্কুল ফেরত বাচ্চাদের সমস্যা হয়। এর জবাবে আদালত জানায়, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং ধরনা কর্মসূচি নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। তাই এই ধরনের কর্মসূচির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সম্ভব নয়।

R.G. Kar : অভয়ার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ন্যায় বিচার চেয়ে প্রতিবাদে পরিবার, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ


আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে পুলিশের পদক্ষেপের অধিকার

আদালত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, যদি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কোনও জটিলতা তৈরি হয় বা হিংসা ছড়ানো হয়, তাহলে পুলিশ অভিযান আটকাতে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। একইসঙ্গে, বিচারপতিরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের সংবিধানের ৫১এ(i) অনুচ্ছেদটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যেখানে বলা আছে, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা এবং হিংসা থেকে দূরে থাকা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য।

সঞ্জয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পরিবারের অসন্তোষ

প্রসঙ্গত, গত বছর ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলে এক তরুণী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন দেহ উদ্ধার হয়েছিল। এই ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়। তবে নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, সঞ্জয় একা নয়, এর পেছনে আরও অনেকে জড়িত। সুবিচার চেয়েই তারা ঘটনার এক বছর পূর্তিতে এই নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সঞ্জয় রায় বেকসুর খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেছেন।

 

রাত দখল কর্মসূচি ও রাজনৈতিক সমর্থন

নবান্ন অভিযানের পাশাপাশি,  ৮ই আগস্ট শহরজুড়ে ‘রাত দখল’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’। এই কর্মসূচিকে বিজেপি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমর্থন জানিয়েছে। রাত ১২টা থেকে পরের দিন ভোর ৪টে পর্যন্ত পথে নেমে প্রতিবাদ প্রদর্শন করা হবে। মশাল মিছিলও করা হবে। ৮ অগাস্ট রাত ১২টায় শ্যামবাজারে জমায়েতের ডাক দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেখান থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মশাল মিছিল করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

CPM support TMC : ভোটব্যাঙ্কের জন্য ‘বাংলাদেশিদের’ রক্ষা করায় তৃণমূলের পাশে বামফ্রন্ট, পাল্টা আক্রমণে বিজেপি

আদালতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন

ন্যায়পরায়ণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আদালত এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থেকেছে। কারণ প্রতিবাদ গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও প্রশাসন নিরাপত্তার অজুহাতে তা বন্ধ করতে পারে। যদিও এই অভিযানে সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছেন, যাদের থেকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা আশা করা যায় না, তবুও আর জি করের মতো ঘটনায় সরকারের উদাসীনতা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ এবং প্রশাসনের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করেছে। এর ফলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদও আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে, যদি প্রশাসন অপ্রয়োজনীয় বাড়াবাড়ি শুরু করে।

প্রশাসন সম্ভবত সমাবেশ এবং মিছিলের স্থান এমনভাবে নির্দিষ্ট করতে চাইবে যা সরকারের অনুকূলে, যা এই প্রতিবাদকে নিছক একটি সাধারণ জনসমাবেশে পরিণত করবে। নবান্ন থেকে বহু দূরে এই অভিযানকে আটকানোর চেষ্টা করা হবে, বিভিন্ন রাস্তা অবরোধ করে। তাই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ এবং পদযাত্রাকে আটকানোর প্রচেষ্টা একটি সংঘাতের রূপ নিতে পারে। এর ফলে, আদালতের প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ এই অভিযানের শান্তিপূর্ণ প্রকৃতিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর

বিশ্ব জুড়ে

গুরুত্বপূর্ণ খবর